জীবনের গল্প-১৪

                   শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু)

জীবনের গল্প-১৩ শেষাংশ↓↓
কিন্তু আমি ভাবতেছিলাম! নতুন মিল। কোরিয়ান মেশিন। এখানেই বা কাকে দিয়ে যাই। এসব নিয়েই ভাবছিলাম!

জীবনের গল্প-১৪ আরম্ভ↓↓
এসব ভাবতে ভাবতেই সারাদিন কানাইকে নিয়ে ফাইন টেক্সটাইল মিলে কাজ করলাম! ভেবেচিন্তে এদিনই বিকালবেলা ফাইন টেক্সটাইল মিলের কাজ সেরে কানাইকে নিয়ে চলে গেলাম, আগে যাকে এই মিলের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ফরিদপুর গিয়েছিলাম, তার কাছে।

ভাগ্য খুবই ভালো ছিলো আমার। ওই লোকটা সেসময় বেকার ছিলো। আমরা দুইজন ওই লোকের সাথে দেখা করার পর তিনিই আগে-ভাগে একটা কাজ দেওয়ার কথা বললো। সেই সুযোগে আমি বললাম, “কষ্ট করে আর দুইদিন ঘরে থাকুন, আমি একটা ব্যবস্থা করছি। কাজের জন্য চিন্তা করবেন না। প্রয়োজনে আমার নিজের কাজ আপনাকে বুঝিয়ে দিয়ে আমি অন্য মিলে গিয়ে কাজ করবো, কথা দিলাম।”
 
আমার কথা শুনে লোকটা হয়ে গেলো খুশীতে আটখানা। আমিও একরকম চিন্তামুক্ত হয়ে কানাই আর আমি যার যার বাসায় চলে গেলাম। রাত্রে বড়দা’র কাছে সবকিছু খুলে বললাম। দাদা শুনলেন, কিন্তু হ্যাঁ না কিছুই বলেননি।

পরদিন সকালে আমরা দুই ভাই ফাইন টেক্সটাইল মিলে গেলাম। ঠিক সময়মতো কানাইও মিলের সামনে এসে হাজির হলো। বড়দা আমাকে বললো, “আগে-ভাগে তুই ম্যানেজারকে কিছু বলিস না। আজ মিলের কাজ সেরে ফতুল্লা ওয়েল টেক্স গিয়ে ম্যানেজারের সাথে ফাইনাল কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নে। তারপর যা করার একটা কিছু করা যাবে।”
আমি মনে মনে বললাম, “হ্যাঁ, বড় দাদার বড় বুদ্ধি!”

সেদিন বিরতিহীনভাবে সারাদিনের মিলের কাজ দুপুরের পর-পর শেষ করে ফেললাম! কানাইকে বললাম, “তুই তাড়াতাড়ি স্নান করে খাওয়া-দাওয়া সেরে আমাদের বাসায় চলে আসবি। তোকে নিয়ে ফতুল্লা কাঠের পুল যাবো।“

যা বলা, সেই কাজ! কানাই ঠিক সময়মতো আমাদের বাসায় চলে আসলো। আমিও একটু আগে থেকেই ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কানাই আসার পর ওকে নিয়ে রওনা হলাম, ফতুল্লা কাঠের পুল ওয়েল টেক্সে। ওয়েল টেক্স যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। ভাবলাম, ম্যানেজার সাহেব মিলে আছে? নাকি নাই!

এই ভাবনা নিয়েই মিলের গেইটের সামনে গিয়ে দারোয়ানকে দেখেই আমি হাসলাম! কারণ, তিনি মিল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। খুবই ভালো লোক! আমি মিলন টেক্সটাইল মিলে কাজ করার সময় থেকে তাকে চিনি। তিনিও আমাকে চেনে জানে। দারোয়ান লোকটিও আমাকে দেখে মুচকি হেসে সামনে আসলো।

আমার কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “আরে বাবু, তুমি এখানে?”
আমিও হেসে বললাম, “আপনি এখানে গার্ডের চাকরি নিয়েছেন? ভালো হয়েছে, দাদা। আমি এসেছি আপনাদের ম্যানেজার সাহেবের সাথে দেখা করতে। উনি কি মিলে আছে?”
দারোয়ান বললো, “আছে! তো কী ব্যাপারে?”
বললাম, উনি আমাকে দেখা করতে বলেছে। তাই ম্যানেজারের সাথে দেখা করতে এসেছি।”
এবার দারোয়ান লোকটা বুঝতে পেরেছে, আমি কেন ওয়েল টেক্সের গেইটে। তিনি আমাদের বললো, “একটু দাঁড়াও, আমি ম্যানেজার সাহেবকে জানাচ্ছি।”

এই বলেই দারোয়ান লোকটা মিলের ভেতরে থাকা অফিসের দিকে দৌড় দিলো। এক মিনিট পর আবার এসে গেইটের পকেট গেইটটা খুলে বললো, “ভেতরে আসো।” মিলের ভেতরে ঢোকার সাথে সাথেই আমাকে দেখে পুরো উইভিং ডিপার্টমেন্টে (তাঁত বিভাগ) হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়ে গেলো। মিলের ভেতরে যে ক’জন তাঁতি কাজ করছে, বেশিরভাগ তাঁতিই আমার পরিচিত ছিলো, তাই এতো হৈ-হুল্লোড়!

কেউ আবার আমাদের সামনে এসে বলছে, “এখানে ভালো বাবু! মালিক ম্যানেজার-সহ মিলের সব স্টাফ খুবই আন্তরিক। তুমি এখানকার কাজটা নিয়ে নেও!”
তাদের কথা শুনে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় মিলের অফিসে চলে গেলাম। আমাদের পেছনে পেছনে মিলের মিস্ত্রিও ছিলো।

অফিসের সামনে গিয়েই ম্যানেজার সাহেবেকে হাতজোড় করে নমস্কার জানালাম। ম্যানেজার সাহেব হেসে বললো, “ভেতরে আসো।”
আমি আর কানাই অফিসের ভেতরে ঢুকলাম। ম্যানেজার সাহেব বসতে বললেন, বসলাম। জিজ্ঞেস করলো, “এখন কোথায় কাজ করো?”
বললাম, “স্যার, কিল্লারপুল ফাইন টেক্সটাইল মিলে।” আমার কথা শুনে ম্যানেজার সাহেব বললো, “ওহ্! ফারুক সাহেবের মিলে?”
বললাম, ‘হ্যাঁ, স্যার!”
তারপর বললো, “এখানে কাজ করলে, ফারুক সাহেবের মিলের অবস্থা কী হবে?”
আমি বললাম, ‘স্যার, এখানকার কাজ ঠিক হয়ে গেলে, ফাইন টেক্সটাইল মিলের জন্য একজন ড্রয়ার ম্যান খুঁজে, সেই মিলের কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। আর কীভাবে কী করবো, সেই চিন্তাভাবনা আমার। এখন বলুন, আমাকে এখানে কীভাবে কাজ দিতে চাচ্ছেন?”

আমার কথা শুনে ম্যানেজার সাহেবে বললো, “এখানে তো স্যুটিং (প্যান্টের কাপড়) চলে। তারপর আবার ডিজাইন। তুমি কি স্যুটিং-এর কাজ করতে পারবে? ভুল হলে কিন্তু একেবারেই চলবে না। নির্ভুলভাবে করতে হবে।”
বললাম, “স্যার, ভুল হবে কেন?”

ম্যানেজার সাহেব হেসে বললো, “বলে কী! এখন যিনি কাজ করছেন, তিনি একটা কাজও একবারে করতে পারে না। নির্ভুলভাবেই কাজ করেছে, অথচ মেশিনে যাওয়ার পর তার নির্ভুল কাজে ভুল ধরা পড়েছে। আবার মেশিন থেকে সেই ভীম কেটে (ভীম– আমি যেই কাজটা করতাম) নামিয়ে করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি ভীমই একবার, দুইবার করে মেশিন থেকে কেটে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এতে করে মালিকও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাঁতিদেরও ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি মিলের উৎপাদনও কম হচ্ছে। এখন তুমি কি নির্ভুলভাবে কাজের গ্যারান্টি দিতে পারবে? পারলে আগামীকাল সকালে মিলে এসে মাত্র একটা ভীম ড্রয়ার করে দেখাও! তারপর আমরা দেখবো তোমার ড্রয়ার করা কেমন হয়েছে। তোমার ড্রয়ার করা সেই ভীম মেশিনে যাবে। মেশিন থেকে কাপড় নামবে। তারপর বোঝা যাবে নির্ভুলভাবে ড্রয়ার করা হয়েছে কিনা। তারপর তোমার সাথে বেতন নিয়ে কথা হবে।“

ম্যানেজার সাহেবের কথায় আমি রাজি হয়ে বললাম, “ঠিক আছে, স্যার। আমি আগামীকাল সকালে আপনার মিলে আসছি। ভীম ড্রয়ার করার হিসাবটা আপনার মিস্ত্রির কাছে বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন।”
ম্যানেজার বললো, “আচ্ছা ঠিক আছে, আগামীকাল সকালে এসে আগে একটা ভীম ড্রয়ার করে মেশিনে উঠাও!”
এই কথার পরই আমরা অফিস থেকে নিচে নেমে আসলাম।

❝কাজের বর্ণনা: ভীম কী? (এই ভীম তৈরি হয় ওয়ার্পিং মেশিনে। যিনি ওয়ার্পিং মেশিন চালক, তাকে ওয়ার্পার বা ভীম মাস্টার বা ওয়ার্পিং মাস্টার বলে। ভীম হলো, লোহার মোটা পাইপের মতো লম্বা একটা রোলার। পাইপ বা রোলারের দুই মাথায় ঢালাই লোহার প্লেট লাগানো থাকে। দুই মাথার দুই প্লেটের মাঝে পেচানো থাকে সুতা।

❝এই সুতা-সহ পাইপ বা লোহার রোলারকে তাঁতের ভীম বলা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাঁতিদের কাছে এই ভীম বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন–পাবনা অঞ্চলে এই ভীমকে টেনা বলে। নরসিংদী এলাকায় এই ভীমকে টানা বলে, ভীম বলে। এই ভীমে পেচানো সুতার পরিমাণও থাকে কাপড় ভেদে। ওইসব ভীমে ৩০০০, ৪০০০, ৫০০০, ৬০০০-১২০০০ হাজার সুতা পর্যন্ত পেচানো থাকে।

❝প্রতিটি সুতা একেকটা বয়া’র (বয়া হলো, লম্বা তার বা গুনার মতো। এর মাঝখানে সুঁইয়ের পাছায় থাকা ছিদ্রের মতো থাকা এমন। সেই বয়া’র ছিদ্র দিয়ে ভীমের মোট সুতাগুলোর একেকটা সুতা (এই সুতাও বিভিন্ন কাউন্টের থাকে। যেমন– কটন সুতা সাধারণত ৬, ১০, ২০, ৩০,৩২, ৪০, ৬০, ৮০, ১০০, কাউন্টের থাকে।

❝পলিয়েস্টার সুতাও বিভিন্ন কাউন্টের থাকে। যামন–৫০,৬৫, ৭৫, ১৫০, ৩০০, কাউন্টের উপরে নিচেও থাকে।) একেকটা বয়া’র ভেতর ডিজাইন মাস্টারের দেওয়া হিসাবমত ( ১-২,৩-৪, বা ১-৩,২-৪ বা ডিজাইন ভেদে ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,১০, এরকমভাবে ঢুকাতে হয়।আবার উল্টা-পাল্টা হিসাবও থাকে) বয়ার ভেতর ঢুকিয়ে আবার সেই সুতাগুলো শানা বা রিট’র ভেতরে ঢুকানো বা সাজানো বা ভরা কাজটাকেই ড্রয়ার বা রেসিং বা বয়া গাঁথা বা ভীম ভরা বলে।

❝যেমন–স্যুটিং(প্যান্টের কাপড়) কাপড় সাধারণত ৬০-৬২” ইঞ্চি চওড়া হয়ে থাকে। যদি শানা বা রিট ৬০ কাউন্টের( শানা বা রিট বা রিডও বিভিন্ন কাউন্টের থাকে। যেমন–৬০ কাউন্টের শানা বা রিট হলে, সেই শানা বা রিট’র প্রতি এক ইঞ্চিতে ঘর থাকবে ৬০-এর অর্ধেক ৬০÷২=৩০টি ঘর। তাহলে, এক ইঞ্চিতে ৩০ ঘর × প্রতি ঘরে ৩ সুতা= এক ইঞ্চিতে ৯০ সুতা। কাপড়ের চওড়া বা পানা ৬০” ইঞ্চি×৯০ সুতা= ওই কাপড়ের ওই ভীমে থাকবে মোট ৫৪০০সুতা।❞

এভাবে বিভিন্ন এরকম কাপড়ের বিভিন্ন কাউন্টের সুতা থাকে। আর ভীমে সুতার পরিমাণও থাকে একের অধিক। আবার সুতার কাউন্টের হিসাবে দৈর্ঘ্যর হিসাবও বিভিন্নরকমের থাকে।

এবার কাজের কথায় আসি। অফিস থেকে নিচে নামার সাথে সাথেই পরিচিত তাঁতিরা হৈ-হুল্লোড় করে জানতে চাইল, “আগামীকাল থেকে এখানে ড্রয়ার করছি কিনা?” তাঁতিদের বললাম, “আগামীকাল সকালে একটা ভীম করে দেখানোর জন্য মিলে আসছি। যদি পারি তাহলে সবসময় করার ব্যাপারে মালিক ম্যানেজারের সাথে কথা পাকাপাকি হবে।”

এই বলেই ওয়েল টেক্স থেকে বের হয়ে আমরা দুইজন যার যার বাসায় চলে গেলাম। পরদিন সকালে কানাইকে নিয়ে আবার ওয়েল টেক্সে গেলাম। ভীম ড্রয়ার করার জন্য সব ঠিকঠাক করে মিস্ত্রি থেকে ড্রয়ার করার হিসাব লিখে নিয়ে কাজ শুরু করলাম। দুই ঘণ্টার মধ্যেই আমার ৬০০০সুতার ভীম ড্রয়ার করা হয়ে গেলো।

মিলের সব তাঁতিরা আনন্দে হাততালি দিয়ে হৈ-হুল্লোড় চিল্লা-চিল্লি শুরু করে দিলো। আমি আর কানাই মিলের বাইরে গেলাম চা- সিগারেট টানতে। মিলের বাইরে থাকা অনেক দোকানদার তো আরও আগে থেকেই পরিচিত ছিলো।

পরিচিত এক দোকানে গিয়ে চা-বিস্কুট খেলাম। সিগারেট টানলাম, পর পর দুই তিনটা। অনেকক্ষণ পর মিলের ভেতরে সোরগোল শোনা যাচ্ছে। তাঁতিদের হৈ-হুল্লোড়, আর চিল্লা-চিল্লি। কানাই হাসতে লাগলো। হাসার কারণ হলো, ভীম,নির্ভুলভাবে ড্রয়ার করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কানাই একশো-তে-একশো নিশ্চিত!

আর আমিতো পুরোপুরিভাবেই নিশ্চিত! তবুও তখন মনের ভেতরে কেমন যেন ধুকধুক করছিল। যদি ভুল হয়! তাই মনে মনে ভগবানকে ডাকতে লাগলাম। বলতে লাগলাম, “হে ভগবান, তুমি সহায় হও! যদি ভুল হয় ভগবান, তাহলে মানসম্মান থাকবে না। আমার মানসম্মান তুমিই রক্ষা করো!

একটু পরই এক অপরিচিত তাঁতি দোকানে এসে আমার হাত টেনে নিয়ে হ্যাণ্ডশেক করলো। বললাম, “কী ব্যাপার ভাই?”
হেসে বললো, “আরে ভাই আপনার কাজের জুরি নেই! মেশিনে ভীম উঠানোর পর একটা সুতাও বয়া’র বাইরে যায়নি। একটা সুতাও ভুল হয়নি। এমন ভীম এই মিল চালু হবার পর আর হয়নি, কেউ করতে পারেওনি। আপনি মিলে গিয়ে দেখেন।”
তাঁতির কথা শুনে একটু সাহস হলো।

চায়ের দাম বুঝিয়ে দিয়ে মিলের ভেতরে গেলাম। যেই মেশিনে আমার ড্রয়ার করা ভীম উঠেছে, সেই মেশিনের সামনে গিয়ে দেখি মেশিন ধুমসে চলছে। পরিচিত কয়েকজন তাঁতি এসে আমাকে ঝাপটে ধরলো।

কিছুক্ষণ পর মালিক ম্যানেজার একসাথে মিলে আসলো। আমার ড্রয়ার করা ভীম কেমন হয়েছে, তা দেখার জন্য ওই মেশিনের সামনে গেলো। দুইজনেই মেশিনের চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখে মিস্ত্রিকে জিজ্ঞেস করলো, “কেমন?”
মিস্ত্রি বললো, “তা তো স্যার আপনারই দেখতে পাচ্ছেন! ভালো স্যার ভালো। ওকেই দরকার।”
মিস্ত্রির কথা শুনে মালিক, ম্যানেজার আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন, দোতলার উপরে থাকা অফিসে। আমার সাথে কানাইও ছিলো।

অফিসে নিয়ে বসতে বললো। আমরা বসলাম। মিস্ত্রিকে বললো, পিওনকে চা-বিস্কুট আনতে বলেন। মিস্ত্রি পিওনকে ডাকতে গেলো। এই ফাঁকে ম্যানেজার আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “কত বেতন হলে এখানে কাজ করবে?” আমি বললাম, “হেলপারের বেতন আপনারা দিবেন। আর আমাকে ৫০০০ টাকা বেতন দিতে হবে।”

ম্যানেজার বললো, “না, হেলপারের ঝামেলা আমরা  নিবো না। হেলপার তোমার অধীনেই থাকবে। হেলপার-সহ কত বেতন দিতে হবো, তা ঠিক করে একবারেই বলে ফেলো।“
বললাম, “তাহলে স্যার, আমাকে মোট ৭০০০টাকা বেতন দিতে হবে। যদি তা দিতে পারেন, তাহলে আমি দুইদিন পর থেকে কাজ করা শুরু করবো।”
ম্যানেজার বললো, “না, বেতন পাবে হেলপার-সহ ৫০০০টাকা। আর ছুটি-ছাটা যা আছে সবই পাবে।”
আমি বললাম, “না স্যার, তাতে আমার হবে না। তাহলে আমি যেখানে আছি সেখানেই আমার ভালো। আপনি অন্য লোক দেখেন।”
এর একটু পরই মিস্ত্রি-সহ পিওন চা-বিস্কুট নিয়ে অফিসে হাজির হলো।

পিওন আমাদের চা-বিস্কুট খেতে দিলো। আমরা চা-বিস্কুট খাচ্ছি। মালিক ম্যানেজার আমাদের ব্যাপারে চুপি-চুপি আস্তে-আস্তে কি যেন বলতে লাগলো। মিস্ত্রির কানে কানেও কি যেন বললো!

তারপর মালিক বললো, “হয়েছে হয়েছে, তোমাকে মোট ৬০০০টাকা বেতন দেওয়া হবে। এর বেশি আপাতত দিতে পারবো না, তুমি আগামীকাল থেকেই কাজে জয়েন্ট করো।”

মিস্ত্রিও অনুরোধ করতে লাগলো। ম্যানেজারও বলতে লাগলো। কানাইকে বললাম, “কি রে? তুই কিছু বল?” কানাই বললো, “তুই আমার ওস্তাদ! আমি তোর উপরে কি কথা বলতে পারি?”
শেষমেশ মালিক, ম্যানেজার, মিস্ত্রির কথায় ৬০০০টাকা বেতনে রাজি হয়ে গেলাম। কোনও অগ্রীম টাকা চাইনি। দুইদিন পর থেকে কাজ জয়েন্ট করবো বলে, অফিস থেকে বের হলাম।

নিচে এসে সব তাঁতিদের সাথে দেখা করে মিল থেকে বের হওয়ার সময় মিস্ত্রি আমার হাতে ২০০টাকা দিয়ে বললো, “এটা আজকের কাজের মজুরি।”
২০০টাকা থেকে কানাইকে ১০০টাকা দিয়ে মিল থেকে বের হয়ে বাসায় চলে গেলাম।
চলবে...

নিতাই বাবু:
ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম,
সোনেলা ব্লগ শব্দনীড় ব্লগ। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী হলো আপনার আমার গর্ভধারিণী মা

গাঁজা বা সিদ্ধি: ইতিহাস, উপকার ও ক্ষতি

মা-বাবার আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ে ও কিছু অলৌকিক ঘটনা