পোস্টগুলি

জীবন লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

জীবনের গল্প-২

ছবি
                   শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-১ শেষাংশ ↓↓ থাকতাম মিল অভ্যন্তরে শ্রমিক ফ্যামিলি কোয়ার্টারে। সময়টা তখন হতে পারে ১৯৭৩ সালের নভেম্বর নাহয় ডিসেম্বর মাস। জীবনের গল্প-২ আরম্ভ ↓↓ গ্রামের বাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জ আসার পর প্রায় মাসখানেক পর্যন্ত আমার কোনও বন্ধুবান্ধব তো ছিল না,  এমনকি মিলের ভেতরে থাকা শ্রমিক কোয়ার্টারের কোনও সমবয়সী ছেলে আমার সাথে কথাও বলতো না।  আমিও মিলের ভেতরে থাকা ওদের সাথে বেশি মিশতাম না। কারণ আমার নোয়াখালীর ভাষা ওরা কেউ বুঝতো না। আমি কিছু বলতে গেলেই আরও চার-পাঁচজন হিহিহি করে হাসতো। ওরা আমাকে দেখলেই নোয়াখাইল্লা নোয়াখাইল্লা বলে হাসাহাসি করতে।  আবার আমার চেহেরাটা বেশি সুশ্রী ছিল না বলে, ওরা আমাকে দেখে ভেংচি দিতো। আসলে ওদের কোনও দোষ ছিল না। দোষ ছিল আমার কুশ্রীত চেহারার। আমার মুখমণ্ডল আরও দশজনের চেয়ে অন্যরকম ছিল। মানে কুশ্রী।  চেহারা কুশ্রী হওয়ার কারণ হলো, আমার বয়স যখন চার বছর; তখন নাকি আমি গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় তিনমাস পর্যন্ত মৃত্যুর সাথে লড়াই করে রোগমুক্ত ...

জীবনের গল্প-১

ছবি
                               শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন একটি ছোট গ্রামের নাম মাহাতাবপুর। মাহাতাবপুর গ্রামটি হলো বেগমগঞ্জ থানাধীন বজরা রেলস্টেশনের পশ্চিমে।  সেই গ্রামের এক হিন্দু পরিবারে আমার জন্ম। আমার জন্ম ৮ই জুন, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। আমার বাবার বাপদাদার আমলটা নিজের চোখে না দেখলেও, তাঁদের সময়টা খুবই ভালো ছিল বলে মনে হয়।  কারণ, মাহাতাবপুর গ্রামে আর কারোর বাড়িতে দালান ঘর ছিল না। দালান ঘর শুধু পুরো গ্রামের মধ্যে আমাদের বাড়িতেই ছিল। তাও আবার ঘরগুলো ছিল চাটগাঁর (চট্টগ্রামের) পাহাড়ি মাটি দিয়ে তৈরি।  ঘরগুলো দেখতে হুবহু গুদামঘরের মতনই দেখা যেতো। যার কারণে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় আমাদের বাড়ির নাম ছিল মাইডগা গুদাময়ালা বাড়ি।  আমার দাদার নাম ছিল পঞ্চনন্দ পাল। বাবার নাম শচিন্দ্র চন্দ্র পাল। আমার বাবার আরও দুই ভাই ছিল। মেজো কাকা যতিন্দ্র চন্দ্র পাল। ছোট কাকার নাম ছিল, শান্তিরঞ্জন পাল।  আমরা ছিলাম চার বোন, দুই ভাই। নিমাই চন্দ্র পাল, রাধা (রাধু) র...

জীবনের গল্প-৩০

ছবি
                     শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-২৯ শেষাংশ↓↓ দিদির বাড়িতে তখনো কেউ ঘুমায়নি। সবাই ঘরে বসে টেলিভিশনে কবিগুরু রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠান দেখছিল। জীবনের গল্প-৩০ আরম্ভ↓↓ আমার বড়দি'র বাড়িতে দুইজন ব্যাচেলর থাকতো। ওদের বাড়ি ছিলো মেদিনীপুর। ওরা বীর পাড়ায় অবস্থিত একটা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে চাকরি করতো।  রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর ওই দুইজন ছেলের সাথে ঘুমানোর জায়গা হলো। পরদিন সকাল বেলা বড়দি আমাকে ঘুম থেকে জাগালো। বেলা তখন সকাল দশটার মতো বাজে। তখন ভাড়াটিয়া ছেলে দুটোও ঘরে ছিলো না। ওরা সকাল আটটার সাথে সাথেই ওদের কাজে চলে গিয়েছিল।  দিদি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “ওখানেও কি তুই এতো দেরি করে ঘুম থেকে উঠিস?” বললাম, “না দিদি, অনেক রাতে ঘুমিয়েছি তো, তাই একটু দেরিতে ঘুম ভাঙলো।” এরপর ঘুম থেকে উঠে স্নানঘর থেকে হাত-মুখ ধুলাম। চা-বিস্কুট খেয়ে বের হলাম, বীরপাড়া বাজারের উদ্দেশে। বীরপাড়া বাজারে গিয়ে বাজারে শেষ মাথায় একটা চায়ের দোকানের সামনে গেলাম। গিয়ে দেখি ভুটান ভুটান বলে জীপ গাড়ির হেলপাররা চিল্লাচিল্লি করছে। তা শুন...

জীবনের গল্প-২৯

ছবি
                     শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-২৮ শেষাংশ↓↓ বড়দি'র বিয়ে হবার ১৫ দিন পরই, তারা সপরিবারে ভারত চলে আসে। এই আসাই এপর্যন্ত। আর আমি বড়দি'র সামনে এসেছি প্রায় ২৯ বছর পর। জীবনের গল্প-২৯ আরম্ভ↓↓ বড়দি মা-বাবা-সহ আমার আরও অনেক আত্মীয়স্বজনদের কথা জিজ্ঞেস করলো। সব কথার উত্তর দিলাম। দিদি জামাইবাবু-সহ বাড়ির আশেপাশের সবাই শুনলো। তারপর আমার হাতে ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো। দিদির সাথে গেলাম বাড়ির ভেতরে।  মুহূর্তের মধ্যে রাবিন্দ্র নগর কলোনি এরিয়ায় খবর পৌঁছে গেলো যে, বাংলাদেশ থেকে অষ্টমদের ছোট মামা এসেছে। এই খবর শুনে দিদি বাড়ির আশপাশে থাকা প্রত্যেক বাড়ির মহিলা-পুরুষ দিদির বাড়ি আসতে লাগলো। সবাই বলতে লাগলো,“এতো বছর পর বুঝি দিদির কথা মনে পড়লো?” কেউ আবার তাদের বাংলাদেশে থাকা বাড়ি-ঘরের কথাও জিজ্ঞেস করতে লাগলো।  ওখানে বসবাসকারী বেশিরভাগ বাঙালি হিন্দুদের পূর্বপুরুষদের বাড়ি একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাশহরে ছিলো। কারোর বাড়ি ফরিদপুর, কারোর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ, কারোর বাড়ি গোপালগঞ্জ। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে কারোর আত্...

জীবনের গল্প-২৮

ছবি
                    শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-২৭ শেষাংশ↓↓ তারপরও তার অভাব নেই! এই টাকা দিয়েই তার ছোট সংসার খুব সুন্দরভাবে চলছে। জানলাম রিকশাওয়ালার কাছ থেকে।  জীবনের গল্প-২৮ আরম্ভ↓↓ প্রায় ১০ মিনিট হতে-না-হতেই রিকশাওয়ালা আমাকে বলছে, “ও-ই যে রবীন্দ্র নগর কলোনি দেখা যাচ্ছে, দাদা।” রিকসাওয়ালার কথা শুনে মনের ভেতরে একটু আনন্দ অনুভূত হলেও সাথে বেড়ে যায় চিন্তা! কারণ আমি বড় দিদির কাছে অপরিচিত একজন।  আনন্দ আর চিন্তা ভরা মন নিয়ে রিকশা চড়ে যাচ্ছিলাম, রবীন্দ্র নগর কলোনির দিকে। রাস্তার দু’পাশে বড়বড় নানারকম পুরানো গাছ। সেখানে  ইটপাটকেলের তৈরি দালানঘর খুব কম। যা দেখা যায়, তা প্রায় সবই বাঁশখুটি ও কাঠের তৈরি টিনের বেড়া আর টালির ছাউনি ঘর।  মাঝে-মাঝে ভুটানিদের কাঠের টংঘর। টংঘরের নিচে শুকর, ভেড়া, মুরগির খামার। উপরে থাকে ভুটানিদের থাকার ব্যবস্থা। ঘরগুলো দেখতে খুবই সুন্দর! বাড়ির চারদিকে নানারকম ফুলগাছ লাগানো থাকে। থাকে সুপারি গাছ সহ নানারকম ফল-ফলারি গাছও।  অন্যান্য গাছের মধ্যে সেখানে সুপারি গাছই বেশি। হ...

জীবনের গল্প-২৭

ছবি
                      শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-২৬ শেষাংশ↓↓ কানাই বলল, ”ধর্মতলা যাবো জলপাইগুড়ির একটা টিকেটের জন্য।” তখন বুঝলাম আগামীকালই আমি বাঘা যতীন ত্যাগ করছি। জীবনের গল্প-২৭ আরম্ভ↓↓ আমি তাড়াতাড়ি করে জামাকাপড় পড়ে নিলাম, কানাইতো আগেই রেডি। একটা অটো চেপে ধর্মতলা উত্তরবঙ্গ বাসস্ট্যান্ডে গেলাম। কিন্তু টিকেট আর কেনা হলো না। কারণ, তখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল, তাই আরও আগে থেকেই টিকেট কাউন্টার বন্ধ।  টিকেট নিতে হলে সকাল ১০ টায় কাউন্টারে আসতে হবে। গাড়ি ছাড়বে দুপুর ২টায়। তা-ই হবে, টিকেট সংগ্রহ সকালেই হবে বললো, “কানাই।”  তারপর ধর্মতলা অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি করে রাত ১০টায় ফিরে এলাম বাঘা যতীন। সেদিন আমাদের ভাগ্যটা ভালোই ছিল। কেননা, বাংলাদেশ থেকে ভারতের বাঘা যতীন আসলাম অনেক দিন হলো। অনেক দিনের মধ্যে এই প্রথম বাড়িওয়ালার ঘরে রাতের খাবার কপালে জুটলো।  সবাই একসাথে বসেই রাতের খাবার খেয়েছিলাম। খাবার শেষে বাড়িওয়ালার পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দিলাম, আগামীকাল বোনের বাড়ি রওনা দিচ্ছি। সেই সাথে ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর ...

জীবনের গল্প-২৬

ছবি
                    শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-২৫ শেষাংশ↓↓ তারপর গেলাম একটা হোটেলে, কিছু খাওয়ার জন্য। কানাই সারাদিন বাইরে ছিল। ওর-ও ভাত খাওয়া হয়নি। তাই এই সন্ধ্যায় হোটেলে ঢোকা। জীবনের গল্প-২৬ আরম্ভ↓↓ কানাই হোটেলে বসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কী খাবি?” বললাম, “রাতের খাবার তো বাসাই খাবো! এখন আর কী খাওয়া যায় ভাবছি!” কানাই বলল, “ওইসব কিছু ভাবা দরকার নেই। রাতে বাসার খাবার কপালে জোটে কিনা সন্দেহ আছে। যা খাবার এখান থেকে খেয়ে নে।” বললাম, “তা জটুক আর না জুটুক, তাতে সমস্যা নেই। এখন হাল্কা পাতলা কিছু খেলেই হবে।” কানাই বলল, “তাহলে বল, কী খাবি?” বললাম, “এক প্লেট ভুনাখিচুড়ি খাবো।” কানাই বলল, “ঠিক আছে তা-ই হবে।” কানাই হোটেল বয়কে দুই প্লেট ভূনাখিচুড়ি দিতে বললো। কিছুক্ষণ পরই হোটেল-বয় দুই প্লেট ভুনাখিচুড়ি আমাদের সামনে এনে রাখলো। মুগডাল দিয়ে রান্না করা ভূনাখিচুড়ি। সাথে ছোট-ছোট টুকরা করা মুরগির মাংস।  হোটেলটা অনেক বড়!ধর্মতলার মধ্যে এই হোটেটাই সবার কাছে খিচুড়ির জন্য সুপরিচিত। খিচুড়ি খেয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে দুইজনে গেলাম বাসস্ট্...

জীবনের গল্প-২৫

ছবি
                    শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-২৪ শেষাংশ↓↓ অবশ্য কানাই বলেছিলো আরও দু'একটা মিলে গিয়ে দেখতে। কিন্তু আমি আর কোনও মিলে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করিনি। জীবনের গল্প-২৫ আরম্ভ↓↓ কিন্তু কানাই আবার আমাকে নিয়ে মিলের ভেতরে গিয়ে সুপারভাইজার বাবুকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনাদের এখানে তাঁতের কাজ ছাড়া ‘ব’ গাঁথার কোনও লোক লাগবে কি না?“ সুপারভাইজার বাবু বললো, “আমি আপনার কথা বুঝে ওঠতে পারছি না যে, ‘ব’ গাঁথা কাকে বলে?“ কানাইকে চুপ রেখে আমি সুপারভাইজার বাবুকে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, শানা এবং বয়ার ভেতর দিয়ে সুতা ভরার কাজটাকে আপনারা কী বলেন?” আমার কথা শুনে সুপারভাইজার বাবু বললো, “ওহ! বুঝেছি বুঝেছি, ওটাকে আমরা রেসিং বলি। আর যিনি এই কাজটা করে থাকে, তাকে বলি রেসিংম্যান।“ বললাম, “আমার এই কাজটাও জানা আছে। যদি আপনার এখানে এই কাজের লোক না থাকে, তাহলে আমাকে এই কাজটা দিতে পারেন।” সুপারভাইজার বাবু হেসে বললো, “দুঃখিত! এই কাজটা এলাকার একজন লোকে করে। আর আপনি তো এই কাজ এখানে করতে পারবেন না। কেননা, আপনার তো হেলপার নেই। এই কাজ করতে হলে আগে দ...

জীবনের গল্প-২৪

ছবি
                     শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-২৩ শেষাংশ↓↓ ব্রিজটির মাঝখানে আছে যানবাহন চলাচলের জায়গা। দুই পাশে মানুষ চলাচলের জন্য ৬ থেকে ৭ ফুট প্রশস্ত রাস্তা।  জীবনের গল্প-২৪ আরম্ভ↓↓ আমি কানাইর সাথে যখন ভারত গিয়েছিলাম তখন ১৪০০ বঙ্গাব্দ, ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ। দেখলাম ব্রজিটিতে তখন কোনও ভারি যানবাহন চলাচল করে না। এর মূল কারণ হল, ব্রিজটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে তাই। এটি কোনও একসময় বিধ্বস্ত হয়ে যাবে বলে ভারতের বড় বড় প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ারদের ধারণা।  তাই ভারত সরকার ব্রিজটির পাশে আরেকটি ব্রিজ তৈরি করে রাখে। সেই ব্রিজটি ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামে নামকরণ করে রাখা হয়, বিদ্যাসাগর সেতু। হাওড়া ব্রিজ থেকে একটু ডানদিকে তাকালেই বিদ্যাসাগর সেতুটি দেখা যায়।  কানাই বলল, “তোকে যদি রাতের বেলা এখানে আনতে পারতাম, তাহলে আরও ভালো লাগত। এখানে দাঁড়িয়ে বিদ্যাসাগর সেতু যেভাবে দেখছিস, রাতে আরও সুন্দর দেখায়। তখন মনে হয় না যে, আমরা ভারত আছি। মনে হয় ইউরোপের কোনও এক শহরে দাঁড়িয়ে আছি!” নিজ চোখে দেখলাম হাওড়া ব্রিজ! পায়ে হে...