এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী হলো আপনার আমার গর্ভধারিণী মা
এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নরী হলো আপনার আমার গর্ভধারিণী মা
লেখক: নিতাই বাবু
ব্লগ বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম-এর পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক
গোদানাইল, নারায়ণগঞ্জ
সহযোগিতায়— চার্টজিপিটি ওপেনএআই
ভূমিকা
“সতিত্ব” শব্দটি শুধু নারীত্বের নয়, মানবতার এক গৌরবময় মাপকাঠি। কিন্তু সমাজ ও ইতিহাস নারীর সতীত্বকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছে, যা পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ছায়া বহন করে। এই প্রেক্ষাপটে ‘সতী নারী’ বলতে আমরা কী বুঝি? কিংবা কাকে ‘সতী’ বলা উচিত? পৌরাণিক কাহিনি, সামাজিক রীতিনীতি আর ব্যক্তি অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা গেলে দেখা যাবে—এ পৃথিবীতে যদি সত্যিকার কোনো সতী নারী থেকে থাকেন, তবে তিনি হলেন আমাদের মা। সেই মা যিনি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, আত্মত্যাগ, রুদ্ধঘরে কষ্ট লুকিয়ে সন্তানকে আগলে রাখার অন্য নাম। এই লেখায় আমরা বিশ্লেষণ করব, কেন 'মা'-ই সতীত্বের সর্বোচ্চ প্রতীক, আর কেন তিনি ব্যতিক্রমহীনভাবে আমাদের সকলের শ্রেষ্ঠতম "সতী নারী"।
মূল লেখা
সতীত্বের প্রচলিত ধারণা ও তার সংকীর্ণতা
সতীত্ব শব্দটি ইতিহাসে এসেছে মূলত দাম্পত্য বিশুদ্ধতা বোঝাতে। হিন্দু ধর্মে ‘সতী’ হলেন সেই নারী, যিনি স্বামীর মৃত্যুর পর সহমরণে আত্মাহুতি দেন। এই ধারণা একদিকে আত্মত্যাগের প্রতীক হলেও অন্যদিকে নারীকে শুধুই যৌন ও পারিবারিক আনুগত্যে বন্দি করে রাখার এক নিপীড়নমূলক ছক। কিন্তু সতীত্ব কি কেবল যৌন শুদ্ধতা, না কি আত্মিক বিশুদ্ধতা? এই প্রশ্নেই আমরা পৌঁছে যাই ‘মা’ শব্দটির কাছে।
মাতৃত্ব: সতীত্বের শ্রেষ্ঠ রূপ
একজন মা নিজ শরীরের ভিতর সন্তান ধারণ করেন। সন্তান পৃথিবীতে আসে মায়ের রক্ত, ঘাম, অশ্রু ও হাড়গোড়ের ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে। মা তার নিজের চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে সন্তানের জন্য রাত জেগে থাকে, উপোস করে, হাজারো অপমান সয়ে নীরবে হাসে। এই নিঃস্বার্থ, নির্ভেজাল প্রেমের কোনো তুলনা নেই। কোনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে এমন নিঃস্বার্থতা খুবই দুর্লভ। তাই সতীত্বের প্রকৃত রূপ যদি হয় আত্মত্যাগ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, তবে সেই মাপকাঠিতে একমাত্র ‘মা’ই প্রকৃত সতী।
ধর্মীয় ও সাহিত্যিক দৃষ্টিতে ‘মা’
বিভিন্ন ধর্মমতে মা হচ্ছে সৃষ্টির সহযাত্রী। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, “জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে”—এ কথা একমাত্র মাতৃত্বের মহানতাকেই বোঝায়। হিন্দু ধর্মে মা কালী, মা দুর্গা—এঁরা সবাই সর্বত্যাগী, সন্তানরক্ষা বা সমাজ রক্ষায় আত্মবিসর্জন দান করেছেন। সাহিত্যেও ‘মা’ চরিত্রটি অদ্বিতীয়—শরৎচন্দ্রের ‘বিলাসী মা’, বা জসীমউদ্দীনের ‘নিমন্ত্রণ’-এর সেই মায়ের আকুলতা আমাদের হৃদয় ভেদ করে। এসব উদাহরণ প্রমাণ করে—‘মা’ শব্দটি কেবল সম্পর্ক নয়, তা এক অনন্য আত্মিক সত্য।
ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও সমাজবাস্তবতা
আমাদের চারপাশে অসংখ্য মা আছেন, যাঁরা নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে মানুষ করছেন। তাঁরা নিজের শাড়ির খুঁটে শুকনো মুড়ি বেঁধে স্কুলে পাঠিয়েছেন ছেলেমেয়েকে, নিজের অনাহার রেখে সন্তানের মুখে তুলে দিয়েছেন শেষ ভাত। তাঁদের কোনো জাতীয় পদক নেই, নেই মিডিয়া কাভারেজ—কিন্তু প্রতিদিন তারা সতীত্বের, মমত্বের এবং মানবতার জীবন্ত প্রতীক হয়ে আছেন। তাঁরা কখনও জুতো কিনতে পারেন না, তবু সন্তানের ফাটা জুতো সেলাই করে দেন। এই নিষ্কলুষ আত্মত্যাগই একমাত্র সত্যিকারের ‘সতী’ নারীর পরিচয় বহন করে।
শেষ কথা
আজকের দিনে যখন নারীদের সতীত্ব নিয়ে নৈতিক পুলিশিং হয়, তখন একটিবার ভাবা দরকার—এমন কোন সম্পর্ক আছে যেখানে সতীত্ব প্রকৃত অর্থে নিঃস্বার্থভাবে বজায় থাকে? উত্তর হবে—মাতৃত্ব। মায়ের প্রতি ভালোবাসা বা কৃতজ্ঞতা শুধু আবেগ নয়, এক বিশুদ্ধ যুক্তি ও বাস্তবতার বোধ। তাই যাঁরা এখনো মায়ের কষ্টের হিসাব রাখেন না, তাদের উচিত একটিবার অন্তর থেকে বলা—“এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী আমার মা”।
উপসংহার
আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সাহিত্যে ‘মা’ শুধু শব্দ নয়—এক জীবন্ত প্রতিমা। তাঁর ভিতরেই সতীত্ব, ত্যাগ, ধৈর্য, ভালোবাসা, ক্ষমা এবং আত্মিক বিশুদ্ধতার মিলন ঘটে। তাই এ কথাই সত্য:
“এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী হলেন আপনার আমার গর্ভধারিণী মা।”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
nitaibabunitaibabu@gmail.com