পোস্টগুলি

জুন ২২, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ভুলে থাকা যায় না

ছবি
ভুলে থাকা যায় না লিখেছেন: নিতাই বাবু ১৯৮৪ সালের শুরু। নারায়ণগঞ্জের গলাচিপা গোয়ালপাড়ায় বড়দার সংসারে থাকতাম মা-সহ। আয়-রোজগার নিয়ে কথাকাটাকাটির পর মা'কে নিয়ে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। নগর খাঁনপুরে হিন্দু ভাড়িওয়ালা শ্যামসুন্দর সাহার বাড়িতে এক ঘর ভাড়া নেই—মাসিক ভাড়া মাত্র ১৫০ টাকা। তখনও আমি অবিবাহিত। চাকরি করি কিল্লার পুলের ফাইন টেক্সটাইল মিলে—বেতন ২০০০ টাকা। মা আর আমি—দুজনের সংসার ভালোভাবেই চলতো। বাসায় ওঠার দিন ছিল শুক্রবার। রিকশায় করে সামান্য মালপত্র নিয়ে এলাম নতুন ঠিকানায়। বাড়ির সামনে পুকুর, আর তার পাশেই রাস্তা ও ভাড়া বাসা। মাল নামানোর সময়ই নজরে পড়লো এক অপার রূপবতী মেয়ের দিকে—গায়ের রং ফর্সা, হাঁটুর নিচ পর্যন্ত চুল, দেবীমূর্তির মতো চেহারা। বারবার আমাদের দিকেই তাকাচ্ছে। আমার সহচর ছিল কানাই লাল—এই এলাকা সম্পর্কে পূর্বপরিচিত। ও-ই বাসা খুঁজে দিয়েছিল। মাল উঠাতে গিয়ে সংকোচ হচ্ছিল—আমাদের গরিবি জিনিসপত্র অন্য ভাড়াটিয়াদের তুলনায় লজ্জাজনক মনে হচ্ছিল। তখনই মেয়েটি এসে বললো, “আপনারা না পারলে আমি সাহায্য করবো?” আমরা না করলেও সে একটি বস্তা হাতে করে ঘরে রেখে এলো। ...

জীবনের গল্প-২

ছবি
                   শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-১ শেষাংশ ↓↓ থাকতাম মিল অভ্যন্তরে শ্রমিক ফ্যামিলি কোয়ার্টারে। সময়টা তখন হতে পারে ১৯৭৩ সালের নভেম্বর নাহয় ডিসেম্বর মাস। জীবনের গল্প-২ আরম্ভ ↓↓ গ্রামের বাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জ আসার পর প্রায় মাসখানেক পর্যন্ত আমার কোনও বন্ধুবান্ধব তো ছিল না,  এমনকি মিলের ভেতরে থাকা শ্রমিক কোয়ার্টারের কোনও সমবয়সী ছেলে আমার সাথে কথাও বলতো না।  আমিও মিলের ভেতরে থাকা ওদের সাথে বেশি মিশতাম না। কারণ আমার নোয়াখালীর ভাষা ওরা কেউ বুঝতো না। আমি কিছু বলতে গেলেই আরও চার-পাঁচজন হিহিহি করে হাসতো। ওরা আমাকে দেখলেই নোয়াখাইল্লা নোয়াখাইল্লা বলে হাসাহাসি করতে।  আবার আমার চেহেরাটা বেশি সুশ্রী ছিল না বলে, ওরা আমাকে দেখে ভেংচি দিতো। আসলে ওদের কোনও দোষ ছিল না। দোষ ছিল আমার কুশ্রীত চেহারার। আমার মুখমণ্ডল আরও দশজনের চেয়ে অন্যরকম ছিল। মানে কুশ্রী।  চেহারা কুশ্রী হওয়ার কারণ হলো, আমার বয়স যখন চার বছর; তখন নাকি আমি গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় তিনমাস পর্যন্ত মৃত্যুর সাথে লড়াই করে রোগমুক্ত ...

জীবনের গল্প-১

ছবি
                               শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন একটি ছোট গ্রামের নাম মাহাতাবপুর। মাহাতাবপুর গ্রামটি হলো বেগমগঞ্জ থানাধীন বজরা রেলস্টেশনের পশ্চিমে।  সেই গ্রামের এক হিন্দু পরিবারে আমার জন্ম। আমার জন্ম ৮ই জুন, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। আমার বাবার বাপদাদার আমলটা নিজের চোখে না দেখলেও, তাঁদের সময়টা খুবই ভালো ছিল বলে মনে হয়।  কারণ, মাহাতাবপুর গ্রামে আর কারোর বাড়িতে দালান ঘর ছিল না। দালান ঘর শুধু পুরো গ্রামের মধ্যে আমাদের বাড়িতেই ছিল। তাও আবার ঘরগুলো ছিল চাটগাঁর (চট্টগ্রামের) পাহাড়ি মাটি দিয়ে তৈরি।  ঘরগুলো দেখতে হুবহু গুদামঘরের মতনই দেখা যেতো। যার কারণে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় আমাদের বাড়ির নাম ছিল মাইডগা গুদাময়ালা বাড়ি।  আমার দাদার নাম ছিল পঞ্চনন্দ পাল। বাবার নাম শচিন্দ্র চন্দ্র পাল। আমার বাবার আরও দুই ভাই ছিল। মেজো কাকা যতিন্দ্র চন্দ্র পাল। ছোট কাকার নাম ছিল, শান্তিরঞ্জন পাল।  আমরা ছিলাম চার বোন, দুই ভাই। নিমাই চন্দ্র পাল, রাধা (রাধু) র...

গ্রাম ছেড়ে কেন আসলাম কংক্রিটের শহরে

ছবি
গ্রাম ছেড়ে কেন আসলাম কংক্রিটের শহরে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন বজরা রেলস্টেশনের পশ্চিমে এক ছোট্ট গ্রাম— মাহাতাবপুর । সেখানেই আমার জন্ম, ১৯৬৩ সালের ৮ই জুন, এক হিন্দু পরিবারে। চোখে না দেখলেও, আমার ঠাকুরদা-পিতামহদের সময়কাল যে অনেক ভালো ছিল, সে ইঙ্গিত মেলে আমাদের পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া বাড়ি দেখলেই। পুরো গ্রামে তখন শুধু আমাদেরই দালান ঘর ছিল— চট্টগ্রাম থেকে আনা পাহাড়ি লালচে মাটি দিয়ে তৈরি সেই ঘরগুলো দেখতে ছিল অনেকটা গুদামঘরের মতো। গ্রামের মানুষের মুখে তাই আমাদের বাড়ির নাম ছিল “মাইডগা গুদামওয়ালা বাড়ি” । আমার দাদার নাম ছিল পঞ্চনন্দ পাল, বাবার নাম শচিন্দ্র চন্দ্র পাল। আমরা ছিলাম চার বোন, দুই ভাই। আমি নিতাই চন্দ্র পাল— সবার ছোট। শুনেছি, আমার ঠাকুরদা চট্টগ্রাম থেকে পণ্য কিনে এনে চৌমুহনী বাজারে বিক্রি করতেন। দোকান, গোডাউন ছিল তার। মাসে বেশ ক'দিন তিনি চট্টগ্রামে থাকতেন, আর সেখান থেকেই এনে দিয়েছিলেন আমাদের সেই বিখ্যাত ঘরের মাটি ও কারিগর। আমাদের পরিবারের দালান ঘরগুলো ছিল মাটি দিয়ে তৈরি হলেও বেশ মজবুত— দেয়াল ছিল প্রায় দুই হাত পুরু । ঘরগুলোর ভিতরে আলাদা আলাদা কক্ষ, উঠোন ...