জীবনের গল্প-৩

                      শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু)

জীবনের গল্প-২ শেষাংশ↓↓

জীবনের গল্প-৩ আরম্ভ↓↓
গায়ে জামা আর পায়ে স্যান্ডেল না থাকলেও স্কুল মিস করতাম না। স্কুলে আমি নিয়মিতই ক্লাস করতাম। ১নং ঢাকেশ্বরী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর নিয়মিত ক্লাস করতাম ঠিক, কিন্তু আমার পড়ার সব বই ছিল না।সেসময় নতুন একসেট বই কেনার মতো সাধ্যও আমাদের ছিল না। 

তখন আদর্শ কটন মিলের ভেতরে থাকা যেসব ছেলে-মেয়েরা ষষ্ঠ শ্রেণি পাস করে সপ্তম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিল, সেসব ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে ওদের পুরাতন ছেঁড়া-ফাঁড়া কয়েকটা বই নামমাত্র মূল্যে সংগ্রহ করলাম। আর কিছু বই বাদ থেকে যায়। 

মা বললো বাদবাকি বইগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই কিনে দিবে। মায়ের কথা মেনে নিয়েই ছেঁড়া ফাঁড়া জামা প্যান্ট পরে হাইস্কুলে যেতাম, আসতাম, ক্লাস করতাম। তবে নতুন হাইস্কুলে যেতাম একা। আসতামও একা।

কারণ, আদর্শ কটন মিলের ভেতরের কেউ এই হাইস্কুলে তখনও ভর্তি হয়েছিল না। তাই একাই যেতাম, একাই আসতাম। সময়টা তখন ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি নাহয় মার্চমাস হবে।

সেসময় দেশে দেখা দেওয়া দুর্ভিক্ষ কিছুটা দূর হতে শুরু করেছিল। অভাব অনটন আর দুর্ভিক্ষ শুধু লেগে থাকলো আমাদের ৯ সদস্যের সংসারে। কিন্তু খাই বা না খাই, আমার স্কুল ছিল নিয়মিত। স্কুলে যেতাম আসতাম ঠিকই, কিন্তু নিজের কাছে ভালো লাগতো না। সংসারের অভাব অনটনের জন্য আমার মনটা সবসময়ই খারাপ থাকতো। 

নতুন হাইস্কুলে ক্লাস শুরু করার প্রায় দুইমাস গত হয়ে গেলেও আমার বাদবাকি বইগুলো আর কেনা হচ্ছিল না। বাবা বড়দা বেতন পাবার পর দেখতাম দোকান বাকি দিয়েই সব শেষ হয়ে যেতো। ঘরে থাকতো না চাল, ডাল, আটা, তেল লবণ, লাড়কি খড়ি। 

তাই আমি স্কুল ছুটির পর বাসায় এসে আবার লাড়কির চাহিদা মেটানোর জন্য গরুর গোবর কুড়াতাম। সে কুড়ানো গোবর মিলের বাউন্ডারি ওয়ালে চাপ্টির মতো করে লেপ্টে দিতাম। দেখতে দেখা যেতো হুবহু আটার রুটির মতো।এগুলোকে বলা হতো, গোবরের ঘুঁটে। 

এই গোবরের ঘুঁটে দিয়ে আমাদের সংসারের লাড়কির চাহিদা মিটত। আমার এই কষ্টের বিনিময়ে বাবা বেতন পেলে আমাকে নামমাত্র কয়টা টাকা দিতেন। সেই টাকা আমি খরচ করে খেতাম না। সেই টাকা দিয়ে পড়ার খাতা-কলম কিনে রাখতাম।

খাতা-কলম কিনে দুইএক টাকার মতো থাকলে, তা দিয়ে স্কুলে যারা আমাকে প্রতিদিন টিফিনের সময় ডেকে নিয়ে যেতো; বেঁচে যাওয়া সেই টাকা খরচ করে আমি তাদের পুরি-শিঙাড়া খাওয়াতাম। ওরা খুব খুশি হতো।

সেসময় সংসারের অভাবের কারণে স্কুল বন্ধের দিনে বাসায় বসে থাকতাম না। মিল গেইটে গিয়ে বসে থাকতাম, কাজের আশায়। মিলের কিছু মালামাল নৌকা করে মিলের নিজস্ব ঘাটে আসতো। 

তখন মালামাল নামানোর জন্য লেবার প্রয়োজন হতো। সেসব লেবারদের সাথে আমিও একজন লেবার হয়ে নৌকা থেকে মালামাল নামাতাম। বড় লেবাররা যদি পেতো ১৫ টাকা, আমাকে দিতো ৫ টাকা। তখনকার সময়ে ৫ টাকার খুবই দাম ছিল। 

ওই ৫ টাকা এনে মায়ের হাতে দিতাম, মায়ের পান সুপারি কেনার জন্য। মা খুবই খুশি হয়ে আমাকে ঝাপটে ধরে কাঁদত। আমার মা সেই টাকা দিয়ে পান সুপারি কিনে খেতেন না। মা সেই টাকা আমার স্কুলের খাতা কলম কেনার জন্য আবার আমাকে দিয়ে দিতেন।

ওই টাকা থেকে কিছু খরচ করে কিছু রেখে দিতাম, বাদ থাকা কয়টা বই কেনার জন্য। কিন্তু শত চেষ্টা করেও একসাথে ২০-২৫ টাকা আর জমাতে পারছিলাম না। তাই বাদবাকি বইগুলো আর সংগ্রহ করা হচ্ছিল না। বইগুলো আমার বাদই থেকে গেলো।

একদিন স্কুলে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ক্লাস চলছিল। তখন আমার কাছে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বই ছিলো না। স্কুলের টিফিন টাইমে আমি এক ক্লাসমেট থেকে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বইটা চেয়ে নিয়ে বসে বসে পড়া মুখস্থ করছিলাম। টিফিনের পরেই ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ক্লাস।

আমি ক্লাসরুমে বসে পড়তে পড়তেই টিফিন টাইম শেষ হয়ে গেল। সব ছাত্রছাত্রী ক্লাসে ঢুকলো। স্যার আসলো। স্যার একেকজনকে প্রশ্ন করছে। যাকে প্রশ্ন করছে, সে দাঁড়িয়ে মুখস্থ পড়া বলছে। এবার স্যার আমাকে আঙুল উঁচিয়ে দাঁড়াতে বললো। আমি দাঁড়ালাম। প্রশ্ন করলেন, আমি আর উত্তর দিতে পারিনি। স্যারের হাতে ঠাসঠাস করে কয়েকটা বেতের বাড়ি খেলাম!

সেদিন বাসায় এসে মায়ের কাছে কেঁদে কেঁদে বললাম, “মা আমি আর স্কুলে পড়বো না”। 
মা জিজ্ঞেস করলেন, “কেন?” 
আমি বললাম, “আমার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বই নেই! আজ স্যারের হাতে মার খেয়েছি, দেখেন!”
মা দেখলো আমার পিঠে ফুলা লম্বা দাগ লাল হয়ে আছে। মা তেলে-জলে মিশিয়ে আমার পিঠে ঢলে দিলেন। 

রাতে বাবা বাসায় আসলে মা বাবাকে সব বৃত্তান্ত খুলে বললো।
বাবা জিজ্ঞেস করলো, “বইয়ের দাম কত?” 
মা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “বইয়ের দাম কত?” আমি বললাম, “২০ টাকার মতো হবে।”
বাবার কাছে মাত্র ১৫ টাকা ছিল। 

বাবা সেই ১৫ টাকা মায়ের হাতে দিয়ে বললো, “এই টাকা দিয়ে ও যেন বই কিনে নেয়।”
মা আমার হাতে বাবার দেওয়া ১৫টাকা দিয়ে বললো, “কালই নারায়ণগঞ্জ থেকে বই কিনে আনবি।”
আমি বললাম, “বইয়ের দাম তো ২০টাকার মতো।” তারপর মায়ের কাছে থাকা আরও ৫টাকা মিলিয়ে আমাকে ২০টাকা দিলো, বই কেনার জন্য। আমার কাছে জমানো ছিল ৫ টাকার মতো। টাকা হয়ে গেলো ২৫ টাকা। আমি মহাখুশি!

রাত পোহালেই শুক্রবার। শুক্রবারে যে নারায়ণগঞ্জে সব দোকান বন্ধ থাকে তা আর আমার খেয়ালে ছিল না। আমি দুপুরে নামমাত্র দু’চারটা খেয়ে স্কুলের জামা-প্যান্ট পরে শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে পায়ে হেঁটে নারায়ণগঞ্জ চলে গেলাম বই কেনার জন্য। 

প্রথমে কালীর বাজার ঘুরে দেখলাম, এতএত বইয়ের দোকানের মধ্যে একটা দোকানও খোলা নেই। গেলাম ডিআইটি মার্কেট। সেখানেও বইয়ের দোকান খোলা পেলাম না। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম টান বাজার। টান বাজার ঘুরে দেখলাম, বইয়ের দোকান খোলা নেই। কোনও জায়গায় বইয়ের দোকান খোলা না পেয়ে হাঁটতে লাগলাম। উদ্দেশ্য বাসায় ফিরে যাবো।

আসার সময় সামনেই দেখি আশা সিনেমাহল। হলের সামনে লোকে লোকারণ্য। হৈচৈ পাড়া-পাড়ি। আশা সিনেমাহলের সামনেই বড় বিলবোর্ডে আর্ট করা বড় বড় ছবি! আশা সিনেমাহলে চলছে তখনকার সময়ে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ” দি রেইন” ছায়াছবি। অভিনয়ে ওয়াসিম অলিভিয়া।

তা দেখে আমার মনের ভেতরে শয়তান ঢুকে গেলো! আমি আস্তে আস্তে হলে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বুকিঙে টিকেট নেই। যা আছে তো ব্লাকে আছে। সেকেন্ড ক্লাস ১০ টাকা। ফাস্ট ক্লাস ১৫ টাকা। এক ব্লেকার আমার সামনে দাঁড়িয়ে সেকেন্ড ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস বলে চিল্লাচিল্লি করছে।

আমাকে নিতে বলছে, “নে নে, টিকেট শেষ! টিকেট শেষ!”
আমি আর মনটাকে সামলালে পারিনি। শয়তানের কাছে হার মেনে বইয়ের চিন্তা না করে ১০টাকা দিয়ে একটা সেকেন্ড ক্লাসের টিকেট কিনে ফেললাম। ব্লেকার আমার হাতে টিকেট দিয়ে বললো, “তাড়াতাড়ি দৌড় দে বেটা শো আরম্ভ হয়ে গেছে।”

আমি তখন টিকেট হাতে নিয়ে দাঁড়াচ্ছি হলের দিকে। কিন্তু কোনদিকে যে সেকেন্ড ক্লাস, তা আর আমার জানা ছিল না। আমি সোজা ফাস্ট ক্লাসের গেইটে গিয়ে গেইট কিপারকে টিকেট দেখাচ্ছিলাম। 

গেইট কিপার আমাকে একটা দমক দিয়ে সেকেন্ড ক্লাসে যাবার রাস্তা দেখিয়ে দিলো। আমি সেকেন্ড ক্লাসের গেইটে গিয়ে টিকেট দেখানোর পর গেইট কিপার আমার টিকেট দেখে হলের ভেতরে ঢুকতে দিলো।

টচ লাইট হাতে চেকম্যান টিকেট দেখে সিট দেখিয়ে দিলো। আমি আমার সিটে গিয়ে বসলাম। ছায়াছবির “দি রেইন” দেখালাম সন্ধ্যা ৬ থেকে রাত ৯ পর্যন্ত। শো শেষ হলো। 

বই কেনার টাকা দিয়ে জীবনের দ্বিতীয়বার সিনেমা দেখে আশা সিনেমাহল থেকে রাত ৯টায় বের হলাম। (জীবনের দ্বিতীয়বার মানে, এর আগেও খুব ছোট থাকতে মায়ের কোলে বসে চৌমুহনী বাজারে থাকা ‘রূপ ভারতি’ সিনেমাহলে “মানুষের মন” ছায়াছবি দেখেছিলাম)।

আশা সিনেমাহল থেকে বের হয়ে সামনে থাকা মিষ্টির দোকান থেকে এক টাকার পরোটা ভাজি খেলাম। রাত তখন প্রায় সাড়ে ৯টার মতো। ভাবলাম এতো রাতে পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরা যাবে না। রিকশা নাহয় বাসে চড়েই যেতে হবে। 

এই ভেবে হাঁটতে হাঁটতে কালী বাজার আসলাম। তখন কালী বাজার থেকে রিকসায় চিত্তরঞ্জন কটন মিল গুদারা ঘাটের ভাড়া ছিল জনপ্রতি ২ টাকা। দুইজন একসাথে ৪ টাকা।

রিকশায় উঠে বসলাম। রিকশাওয়ালা আরেকজন জোগাড় করার জন্য চিত্তরঞ্জন চিত্তরঞ্জন একজন একজন বলে চিল্লাচ্ছিল। কিন্তু চিত্তরঞ্জনের একজন প্যাসেঞ্জার আর পাচ্ছিল না, আমি রিকশায় উঠে বসেই রইলাম। 

প্রায় আধাঘন্টা হয়ে গেল, রিকশাওয়ালা একজন প্যাসেঞ্জার আর পাচ্ছিল না, আমিও তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে পারছিলাম না। শেষমেশ আমি নিজের আরেকজনের ভাড়া বেশি দিয়ে একাই রিকশা নিয়ে চিত্তরঞ্জন গুদারাঘাট চলে আসলাম। 

কিন্তু এতো রাতে গুদারা ঘাটের খেয়া নৌকা থাকে না। নদীর এপার-ওপার মিলিয়ে দু’একটা নৌকা আছে মাঝিদের নিজস্ব নৌকা। চিত্তরঞ্জন গুদারা ঘাটে একটা ছৈয়ানৌকা যাত্রীর আশায় বাঁধা আছে। কিন্তু নদী পার হবার মতো আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না বলে, মাঝি বেটাও একজন নিয়ে নদী পাড়ি দিবে না। 

তখন গুদারা ভাড়া ছিল পাঁচ পয়সা। আর মাঝিদের নিজস্ব খেয়ানৌকায় জনপ্রতি ভাড়া ছিলো চারআনা। তখন গুদার ঘাটেই রাত হয়ে গেলো প্রায় ১১টা।

উপায়ন্তর না দেখে মাঝি বেটার হাতে-পায়ে ধরে দুই টাকা দিয়ে নদী পাড় হয়ে বাসায় গেলাম। বাসার সামনে যেতেই শুনি মায়ের কান্নাকাটি, আর বাবার ও বড় দাদার চিল্লাচিল্লি। 

মাথা নিচু করে চোরের মতো বাসায় ঢুকতেই, আমার বড় দাদা আমাকে খপ করে ধরে ফেললো। মুহূর্তেই আশে-পাশের বাসার মানুষ জড়ো হয়ে গেলো। বাবা বড় দাদাকে বলতে লাগলো, “ওকে মারবি না, শুধু জিজ্ঞেস কর; ও কোথায় গিয়েছিল।”
তারপরও বড় দাদা দুই গালে দুটো চড় মেরে জিজ্ঞেস করলো, “বল কোথায় গছিয়েছিলি?” 
মাথা নিচু করে উত্তর দিলাম, “বই কিনতে নারায়ণগঞ্জ গিয়েছিলাম।”
বড় দাদা আবার জিজ্ঞেস করলো, “বই কোথায়?” বললাম, “আজ তো শুক্রবার ছিল, তাই সব বইয়ের দোকান বন্ধ।”
“তাহলে টাকা কোথায়? বের কর!” বললো বড় দাদা। ভয়ে ভয়ে মিথ্যে বললাম, “টাকা হারিয়ে ফেলেছি।”
এই কথা বলার সাথে সাথে আমার বাবার এক বন্ধু গৌরাঙ্গ কাকা দৌড়ে এসে আমাকে চড়থাপ্পড় মারা শুরু করে দিল। 

আমি মা গো মা গো বলে চিৎকার করতে লাগলাম। কিন্তু না, সেদিন সেসময় আমার মা আর বড় দিদিরাও যেন নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছিল। কেউ আমাকে ঐ কাকার হাত থেকে রক্ষা করেনি। আমিও আর সত্য কথা বলিনি, মিথ্যের মাঝেই রয়ে গেলাম। 

বাসার সামনে একটা কাঁঠাল গাছ ছিল। বাবার বন্ধু গৌরাঙ্গ কাকা আমাকে সেই কাঁঠাল গাছের সাথে দুইহাত পিছনে দিয়ে বেঁধে রেখেছিল, সত্য ঘটনা উদঘাটনের জন্য। কিন্তু আমি বান্দা সেদিন আর সত্য কথা বলিনি। আমার একটা কথাই ছিল, টাকা প্যান্টের পকেট থেকে হারিয়ে গেছে। 

তারপরও আমাকে কাঁঠাল গাছের সাথে রাত দুইটা পর্যন্ত বেঁধে রেখেছিল। রাত যখন দুইটা ছুঁই ছুঁই করছিল, মা তখন কেঁদে কেঁদে বাবা দাদাকে বলেকয়ে গৌরাঙ্গ কাকার অনুমতি নিয়ে আমাকে ছেড়ে দিল।

ছাড়া পেয়ে আমি কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম, “আমার বাবার টাকা হারিয়েছি তাতে কাকার কী? গৌরাঙ্গ কাকা আমাকে মারল কেন?”

মা বললেন, “আরে চুপ কর, এই কাকাই তো একসময় তোর প্রাণ বাঁচতে সাহায্য করেছিল। যখন তোর গায়ে গুটিবসন্ত উঠেছিল। তোকে নিয়ে বাড়ি থেকে এখানে আসার পর এই গৌরাঙ্গ ঠাকুরপো তাদের ঘরে আমাদের থাকতে দিয়েছিল। আজ নাহয় তোকে দুটো চড়থাপ্পড়ই মেরেছে, তাতে কী হয়েছে? চল ভাত খাবি।”

আমি মায়ের কথা না শুনে রাগে কাঁদতে কাঁদতে সোজা মিলে অভ্যন্তরে থাকা খেলার মাঠের দিকে চলে গেলাম। এর ঘণ্টাখানেক পর মা-বাবা দুইজন বাসা থেকে আমাকে খুঁজতে খুঁজতে মাঠে এসে দেখে আমি মাঠের এককোণে বসে আসি। 

তখন মায়ের সাথে বাবাকে দেখে আমি আর রাগ করে বসে থাকতে পারিনি। মা বাবার সাথে বাসায় গিয়ে না খেয়েই শুয়ে রইলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার আগের নিয়মেই পড়তে বসলাম। স্কুলের সময় স্নান করে বই নিয়ে স্কুলে চলে গেলাম।

স্কুলে গিয়ে ক্লাসে বসে বসে গতরাতের কথা ভাবতে লাগলাম! ভাবলাম! সত্যি আমি গতকাল দুইটা অন্যায় করেছি। একটা হলো, বই কেনার টাকা দিয়ে সিনেমা দেখেছি। আরেকটা হলো, গৌরাঙ্গ কাকার উপর অযথা রাগ করেছি। সত্যি অন্যায় করেছি। 

ভেবেছিলাম অভাবগ্রস্ত সংসারের কথাও। একসময় ক্লাস আরম্ভ হলো। স্কুল ছুটি হলো। বাসায় এসে বইয়ের জায়গায় বই রেখে পরনের জামা-প্যান্ট খুলে ভাত খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে মাঠে গেলাম। সব সমবয়সী বন্ধুরা আমাকে দেখে গতকালের ঘটনা নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো।

কেউ আবার জিজ্ঞেসও করলো, “সত্যি করে বলতো গতকাল তুই কোথায় গিয়েছিলি?” 
কারোর কথার জবাবই দিচ্ছিলাম না, শুধু শুনেই যাচ্ছিলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। কেউ বললো চল, হাতমুখ ধুয়ে লক্ষ্মণখোলা ক্লাবে গিয়ে টেলিভিশন দেখে আসি। 

কিন্তু আমার কিছুই ভালো লাগছিল না। বারবার মনে পড়ছে বই কেনার টাকা দিয়ে সিনেমা দেখার কথা। টাকার জন্য আমার তখন শোকে ধরে গেল। বই কেনা হলো না, অথচ টাকা খরচ করে ফেললাম! মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, এই টাকা যে করেই হোক জোগাড় করবই। গেলাম বন্ধুদের সাথে টেলিভিশন দেখতে। বাসায় ফিরে সেদিন আর পড়তে বসিনি। দুইটা আটা রুটি খেয়ে শুয়ে রইলাম।
চলবে...

ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম,

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী হলো আপনার আমার গর্ভধারিণী মা

গাঁজা বা সিদ্ধি: ইতিহাস, উপকার ও ক্ষতি

মা-বাবার আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ে ও কিছু অলৌকিক ঘটনা