জীবনের গল্প-১১

                     শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু)

জীবনের গল্প-১০ শেষাংশ↓↓
ড্রয়ার ম্যান বা রেসিং ম্যানের কাজটা ছিলো খুবই খেয়ালি ও ধৈর্যশালী কাজ। এই কাজটা করতে হতো নির্ভুলভাবে! 

জীবনের গল্প-১১ আরম্ভ↓↓
ফতুল্লা কাঠেরপুল “মিলন টেক্সটাইল” মিলে আমরা দুই ভাই কাজ করে যা পাচ্ছিলাম, তা দিয়ে খুব সুন্দরভাবেই আমাদের সংসারটা চলছিল। হঠাৎ একসময় মিলের মালিক ‘মিলন সাহেব’ আর্থিক সংকটে পড়ে মিল বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, আমরা পড়ে গেলাম বিপাকে!

তখন আমার বড়দাদা হাজীগঞ্জ এলাকার কিল্লারপুল “ফাইন টেক্সটাইল” নামে নতুন এক মিলে কাজ নেয়। মিল মালিকের নাম ‘ফারুক সাহেব’। ফারুক সাহেবের বাড়িও ছিল বিক্রমপুর। কাপড়ের ব্যবসা ছিল ঢাকা ইসলামপুর। ফাইন টেক্সটাইল মিলটা সবেমাত্র নতুন। 

নতুন অবস্থায় মিলে তাঁতি-সহ আরও অন্য সেকশনেও লোকের অভাব ছিল। তাই আমার বড়দাদা আমাকে ফাইন টেক্সটাইল মিলে তাঁতের কাজ করতে বললে, আমি বড়দা’র কথামতো ফাইন টেক্সটাইল মিলে প্রথমে তাঁতের কাজই করতে থাকি।

ফাইন টেক্সটাইল মিলের ড্রয়ার ম্যান ছিল নরসিংদীর একজন। তিনি একবার ছুটি নিয়ে বাড়িতে গেলে উনার আর মিলের খবর থাকতো না। তখন মিলের তাঁতি-সহ মিল মালিকেরও বারোটা বেজে যেতো। এই ঝামেলার কারণে মিল মালিক ওই লোককে বাদ দিয়ে অন্য একজন লোককে নিয়োগ দিতে বলে। 

মালিকের কথামতো মিল ম্যানেজার মিলের সকল শ্রমিকদের বিষয়টি জানালে, আমার বড়দাদা ম্যানেজার সাহেবকে বললো ড্রয়ার ম্যানের কাজটা আমাকে দিতে। বড়দা’র অনুরোধে ম্যানেজার “রাজু আহমেদ” ইন্টারভিউ হিসেবে দুই-তিন দিনের জন্য ড্রয়ার ম্যানের কাজটা আমাকে করতে বললে, আমি পড়ে যাই বিপাকে।

কারণ, সেসময় আমার সাথে কাজ করার হেলপার ছিল না। আর হেলপার ছাড়া ড্রয়ার ম্যানের কাজটাও করা যায় না। মিলন টেক্সটাইল মিলে যেই হেলপার ছিল, সেই হেলপারকে আমি নিজেই মিলন টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন আরেকটা মিলে আরেকজন ড্রয়ার ম্যানের সাথে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলাম।

উপায়ন্তর না দেখে আমি নিকটস্থ নগর খাঁনপুর গিয়ে আগের পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের কাছে একজন লোকের দরকার বলে জানাই। তখন নগর খাঁনপুর মহল্লার পরিচিত এক বেকার ছেলের সন্ধান পাই। ওই ছেলেকে বলে-কয়ে সাথে নিয়ে ফাইন টেক্সটাইল মিলে ড্রয়ার ম্যানের কাজ করতে থাকি।

যেই ছেলেটাকে আমার সাথে কাজ করার জন্য এনেছি, সেই ছেলেটা টেক্সটাইল মিলের কাজ আর কখনো করেনি। আমার সাথেই প্রথম টেক্সটাইল মিলে কাজে আসা। ছেলেটার নাম, “কানাই লাল সাহা।” নতুন হেলপার কানাইকে নিয়েই ফাইন টেক্সটাইল মিলে ড্রয়ার ম্যানের কাজ শুরু করি।

প্রথম দিনের প্রথম কাজেই মিলের তাঁতিদের অনেক প্রশংসা আর বাহাবাহা কুড়ালাম। তিন-চার দিন পর ফাইন টেক্সটাইল মিলের মালিক মিলে আসার পর আমার ব্যাপারে তাঁতিদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে, মিলের সকল তাঁতিরা এই কাজে আমাকেই রাখতে বললো। 

তাঁতিদের কথা শুনে মালিক ফারুক সাহেব আমাকে সবসময়ের জন্য ড্রয়ার ম্যানের কাজ করতে বললে, আমি কানাইকে নিয়ে রেগুলার ফাইন টেক্সটাইল মিলে ড্রয়ার ম্যানের কাজ করতে থাকি।

কানাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে করতে একসময় কানাই হয়ে গেলো আমার প্রিয় বন্ধু। অবশ্য কানাই আমার বয়সের দিক দিয়ে চার-পাঁচ বছরের ছোট ছিলো। কিন্তু হাতে-পায়ে ছিলো আমারমতো উঁচা-লম্ব। দুইজন একসাথে চলাফেরা করলে কে বড় আর কে ছোট, অনেকেই বুঝতে পারতো না। 

যেখানেই যেতাম কানাইকে সাথে নিয়েই যেতাম। যখন যা-কিছু খেতাম, কানাইকে নিয়ে খেতাম। এভাবে দুই-তিন মাস কাজ করার পর আমার আর নারায়ণগঞ্জ গলাচিপা গোয়ালপাড়া থেকে আসা-যাওয়া করে কাজ করতে ভালো লাগছিল না। 

বিষয়টি আমার মাকে জানালাম। মা আবার বড়দা’কে জানালো। বড়দাদা মা-কে বললো, “ওর যদি এখান থেকে আসা-যাওয়া করতে সমস্যা হয়, তাহলে ওকে বলবেন মিলের সাথে নগর খাঁনপুর আগের মহল্লায় একটা বাসা নিতে। আমি গলাচিপা এখেই থাকবো।“
 
বড়দা’র কথা মা আবার আমাকে বললো। আমি তখন কানাইকে বললাম, “আমার জন্য একটা বাসা ঠিক করতে।” 
কানাই নগর খাঁনপুর পুকুরপাড়ে ওদের বাসার সাথেই শ্যামসুন্দর সাহার বাড়িতে আমার জন্য একটা বাসা দেখে। এরপর আমি কানাইকে সাথে নিয়ে শ্যামসুন্দর সাহার বাড়িতে গিয়ে বাসা দেখি। বাসা ভাড়া প্রতিমাসে ১৫০ টাকা। 

বাসাটা ছোটো ছিলো বলেই বাসা ভাড়া ১৫০/= টাকা। আমার পরিবারের সদস্য বলতে ছিলাম আমি, মা, আর বোন মরা ভাগ্নী। বাসাটা ছোট হলেও, আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিলো মনে করে বাড়িওয়ালাকে কথা দিলাম, এই বাসা আমিই নিবো।

তখন কিল্লার পুল ফাইন টেক্সটাইলে কাজ করে প্রতিমাসে বেতন পেতাম ২০০০/=টাকার মতো। বাজারে চাউলের মূল্য ছিল প্রতি সের ৫-৬ টাকা। তাতে হিসাব করে দেখলাম, যেই টাকা বেতন পাবো, তাতে মাকে নিয়ে সুন্দরভাবে চলতে পারবো।

সময়টা ছিলো ১৯৮৪ সাল। একসময় বাসা ভাড়া ঠিকও করে ফেললাম। বাসা ভাড়া ঠিক করে যেদিন বাসায় ঢুকবো, সেদিন ছিল শুক্রবার, ঠিক দুপুরবেলা। সেদিন দাদার বাসা থেকে কিছু দরকারি মালা-মাল নিয়ে ভ্যানগাড়ি করে নগর খাঁনপুর মহল্লায় আসলাম।

মালা-মালের মধ্যে তেমন কোন দামী কোনও আসবাবপত্র ছিলো না। তারপরেও মোটামুটি যা ছিলো, গরিব সমাজে চলনসই ছিলো। আমি আর কানাই, দুইজনে মিলে মালা-মালগুলো ভ্যানে করে বাসার সামনে আনলাম। বাসার সামনেই ছিলো পুকুর। পুকুর পাড়েই ছিলো শ্যামসুন্দর সাহার বাড়ি। 

বাড়ির সামনে যখন ভ্যানগাড়ি রাখলাম, তখন অমার চোখ পড়ল শ্যামসুন্দর সাহার বাড়িতেই থাকা একটা মানুষের উপর। মানুষটা ছিলো এক মেয়ে মানুষ।

মেয়েটা খুবই সুন্দর ও রূপসী ছিলো। গায়ের রং ছিলো ফর্সা। মায়াবী চেহারা। যেন হাতে গড়া এক মাটির মূর্তি দেবী দুর্গা। হাটু পর্যন্ত তার মাথার চুল। অপরূপ এক রূপবতী। আমি চেয়ে চেয়ে মেয়েটাকেই শুধু দেখতেছিলাম। 

মেয়েটার নজরও ছিলো আমাদের দিকেই। মেয়েটা খানিক পরপর শুধু আমাদের দিকেই আনা-গোনা করতে লাগলো। মেয়েটির এমন আনা-গোনা দেখে আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম। তখন আর ভ্যানগাড়ি থেকে এই সামান্য মালামাল নামাতে ভাল লাগছিল না। 

লজ্জা লাগার কারণও ছিলো। কারণটা ছিলো, যেই বাড়িতে বাসা ভাড়া নিলাম, সেই বাড়িতে আরো দুই-তিন ফ্যামিলি ভাড়াটিয়া ছিলো। তারা সবাই ছিলো ছোটখাট ব্যবসায়ী। তাদের ঘরে আসবাবপত্রের অভাব ছিলো না। তাদের সাথে তো আমার মত গরিব মানুষের খাপ খাবে না বলেই, আমার কাছে কেমন যেন লজ্জা- লজ্জা লাগছিল।

ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম,কী যে করি! কানাই’র কথায় কেন এই বাড়িতে বাসা ভাড়া নিলাম! অবশ্য এর আগেও আমরা সপরিবারে এই নগর খাঁনপুরেই ভাড়া ছিলাম। সেই আগের চেনাজানা বলেই কানাই’র কথায় আবার এই এলাকায় শ্যামসুন্দর সাহার বাড়িতে আসলাম বাসা ভাড়া নিয়ে। কিন্তু এখন তো এই বাড়িতে আমার মতন অধমেকে মানাবে না। এসব নিয়ে একা একাই ভাবছিলাম!

এমন সময়ই কানাই বলছে, “কি রে! মালগুলি ধর! তাড়াতাড়ি করে ঘরের ভেতরে নিয়ে যাই। খানিক পর তো আবার সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আবার বাজারে যেতে হবে না? নতুন বাসা, কতকিছুর দরকার হবে! সবই তো তোর আস্তে আস্তে কিনতে হবে।“

কানাই’র কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে দুইজনের দ্রুত টুকিটাকি মালা-মাল ভ্যানগাড়ি থেকে নামানো শুরু করলাম। একটু পরে ওই মেয়েটা আমাদের সামনে আসলো। 

সামনে এসেই বললো, “আপনারা দুইজনে না পাড়লে আমিও কিছু-কিছু নিয়ে যাই? মামা (শ্যামসুন্দর সাহা) আমাকে পাঠিয়েছে আপনাদের সাথে ভ্যানগাড়ি থেকে ধরা-ধরি করে নামাতে। আমি চুপ করে ছিলাম, কোন কথা’ই বলিনি। 

কানাই বললো, “না না থাক, তোমার লাগবে না, যা আছে সেটা আমরা দুইজনেই পারবো, তুমি যাও।”
তারপরেও মেয়েটা হাড়ি-পাতিলের বোস্তাটা হাতে করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আমার ভাড়া করা বাসায় নিয়ে রাখলো। বাকি মালগুলো কানাই আর আমি দুইজনে নিলাম। সাথে সাহায্যকারি রিকশওয়ালাও ছিলো।

আমার মা গলাচিপা গোয়ালপাড়া থেকে আসলো বিকালবেলা। মা আসার আগেই দুইজনে জিনিসপত্রগূলো ঘরের ভিতরে সব গোছ-গাছ করে রেখেছিলাম। মালপত্রগুলি গোছানোর সময়ও মেয়েটা বারবার একটু পরপর আমাদের সাহায্য করার জন্য আমার ঘরের সামনে যাওয়া-আসা করছিল। 

কিন্তু আমরা কিছু বলছি না দেখে, আমার ঘরের ভেতরে আসছে না, বাইরে থেকেই আনা-গোনা করছিল। একটু পরে মা বললেন, “যা রান্না করার জন্য কিছু বাজার-সদাই করে নিয়ে আয়।”
মাকে বললাম, “বাজারের ব্যাগটা দিন, আর কী কী আনবো বলেন।”
কী কী লাগবে মা বললেন, আর ওমনি ব্যাগ নিয়ে কানাই আর আমি দুইজনে বাজারের চলে গেলাম। মজিদ খাঁনপুর বাজার থেকে কিছু বাজার-সদাই করে বাসায় ফিরলাম। 

মা রাতের খাবার তৈরি করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। রাতের খাবারে কানাইকে আমাদের সাথে খেতে বললাম। কানাই ঠিক সময়মত আমার বাসায় এসে হাজির হলো। মা দুইজনকে ভাত খেতে দিলেন। আমরা দুইজন ভাত খাচ্ছিলাম। এমন সময় আবার মেয়েটা এসে মাকে বললো, “মাসিমা কী রান্না করলেন এত তাড়াতাড়ি?”

“ইরি চাউলের ভাত, মুশরের ডাইল রান্না করেছি।” মা জবাব দিলেন। 
মেয়েটা বাড়িওয়ালার ঘরে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে একটা কাঁসার বাটি করে কিছু তরকারি এনে দিলেন, আমার মায়ের হাতে। মা প্রথমে রাখতে চায়নি। মেয়েটা তখন রাখার জন্য অনুরোধ করলো। তখন মা ওর অনুরোধে তরকারির বাটি রাখলো। সেই তরকারি আমাদের দুইজনকে ভাগ করে দিলো। আমরা দুইজন খেলাম।

খাওয়া-দাওয়া সেরে হাত-মুখ ধুয়ে বাহিরে গেলাম। বাড়ির সাথেই চা’র দোকান, মুদি দোকান ছিলো। দোকান থেকে দুইজনে চা-সিগারেট টেনে আমি বাসায় আসলাম। কানাই ওদের বাসায় চলে গেলো।

এরপর মেয়েটার বিষয়-আশয় জানলাম। মেয়েটা কে? ওদের বাড়ি কোথায়? ওরা কয় ভাই, কয় বোন। মেয়েটি ছিলো এক দুখিনী মায়ের দুখিনী। মেয়েটার নাম মণিকা, (ছদ্মেমনাম) ৷ 

মেয়েটার বাবা জীবিত ছিলো না! মেয়েটা এই বাড়িওয়ালার বাসায় থেকে কাজ করে। বাড়ি মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর। ওরা একভাই একবোন। মা জীবিত আছে। ওর মা-ও অন্য একজনের বাসায় কাজ করে। একসময় মেয়েটি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে।

কিন্তু আমি কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছিলাম না। তারপরও আমি বাসায় গেলে মেয়েটা সবসময় আমার পেছনে পেছনেই থাকতো। আমি ভীষণ ভয় পেতাম! কারণ, যদি কিছুর থেকে কিছু রটে যায়? তাই সবসময় ভয়ে ভয়ে মেয়েটাকে এড়িয়ে যেতাম। কিন্তু আমার মা মেয়েটাকে খুভ ভালোবাসতো, পছন্দও করতো।

আমারও পছন্দ হতো, ভালো লাগতো। তারপরও আমি বান্দা পাত্তা দিতাম না। এড়িয়েই যেতাম। একসময় মেয়েটি নিজেই কানাই’র কাছে আমার প্রতি ওর ভালোবাসার কথা বললো। কিন্তু না, আমি সবসময়ই দূরে দূরেই থাকতাম। 

কারণ, আমি মনে করতাম, সেসময় আমার বিয়ের বয়স হয়নি। তারপর ছিলো সংসারের অস্বচ্ছলতা। একসময় মেয়েটার বিয়ে ঠিক হলো। মেয়েটি রাজি ছিলো না। শেষমেশ মেয়েটিকে আমি নিজের বলেকয়ে বিয়েতে মত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। 

আমার অনুরোধে মেয়েটি বিয়েতে রাজি হয়। বিয়ের দিন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পর, মেয়েটিকে বরের হাতে আমি নিজেই উঠিয়ে দেই। এই নিয়ে গত কয়েক বছর আগে অনলাইনে থাকা এক ব্লগ সাইটে “এক বিকেলের ভালো লাগা সারাজীবনের স্মৃতি” শিরোনামে একটা পোস্ট ব্লগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে লিখেছিলাম। যাক সেকথা, নিজের কথায় আসি।  
চলবে...

ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম,

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী হলো আপনার আমার গর্ভধারিণী মা

গাঁজা বা সিদ্ধি: ইতিহাস, উপকার ও ক্ষতি

মা-বাবার আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ে ও কিছু অলৌকিক ঘটনা