আদমজী জুট মিলের ইতিহাস ও বর্তমান আদমজী ইপিজেড
আদমজী জুট মিলের ইতিহাস ও বর্তমান আদমজী ইপিজেড
ভূমিকা
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে আদমজী জুট মিল এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের নাম। এক সময়ের বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকল, আদমজী ছিল কেবল একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান নয়—বরং জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এই মিলের ভূমিকা ছিল অনন্য।
আদমজী জুট মিল: এক ইতিহাস
- প্রতিষ্ঠা: ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে
- শুরু: ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে উৎপাদন
- প্রথম ইউনিটে ছিল ১৭০০ হেসিয়ান ও ১০০০ সেকিং লুম
- চাকরি করতেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক
এশিয়ায় খ্যাতি ও স্বর্ণযুগ
১৯৬০-৭০ এর দশকে আদমজী জুট মিল এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ পাটকল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। বৈদেশিক রপ্তানিতে এই মিল একাই আনে কোটি কোটি ডলার। ব্রিটেন, তুরস্ক, জার্মানি, জাপান সহ বহু দেশে বাংলাদেশি পাটপণ্য পৌঁছাতো আদমজীর হাত ধরে।
জাতীয়করণ ও পতন
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এটি জাতীয়করণ করা হয় এবং বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের আওতায় আসে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ, অনিয়ম, প্রশাসনিক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মিলটিকে লোকসানের মুখে ফেলে।
২০০২ সালের ৩০ জুন আদমজী জুট মিল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রায় ২৪ হাজার শ্রমিক একদিনে বেকার হয়ে পড়েন।
বর্তমান আদমজী ইপিজেড
২০০৬ সালের ৬ মার্চ, পুরনো মিলের জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় “আদমজী এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন” (Adamjee EPZ)। এটি বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (BEPZA) পরিচালিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইপিজেড।
- মোট জমি: ২৪৫ একর
- প্লট সংখ্যা: ২২৯
- প্রথম বছরে বিনিয়োগ: ৪০ মিলিয়ন ডলার
- বর্তমান রপ্তানি: ৪৪৮৩ মিলিয়ন ডলার (২০১৯)
- শ্রমিক সংখ্যা: প্রায় ৬২,২০০ জন
- নারী শ্রমিক: ৬৫% এর বেশি
- শিল্পপ্রকার: গার্মেন্টস, সোয়েটার, হ্যাঙ্গার, মোজা, ইলেকট্রনিক্স, লেভেল, কার্টন, জুতা ইত্যাদি
সময়কাল | প্রতিষ্ঠান | মূল লক্ষ্য | অর্জন |
---|---|---|---|
১৯৫০–২০০২ | আদমজী জুট মিল | পাট প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি | এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল |
২০০৬–বর্তমান | আদমজী ইপিজেড | শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প | ৬২ হাজার+ কর্মসংস্থান |
উপসংহার
আদমজী জুট মিল বাংলাদেশের শিল্প ঐতিহ্যের প্রতীক। যদিও আজ সেই কলকারখানার শব্দ থেমে গেছে, তবে একই স্থানে গড়ে ওঠা আদমজী ইপিজেড এখন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটা প্রমাণ করে—সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় পুরনো ধ্বংসস্তূপ থেকেও নতুন সম্ভাবনার জন্ম সম্ভব।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
nitaibabunitaibabu@gmail.com