গণেশের আসল মাথা ও হাতির দেহটা কোথায় এবং কীভাবে পূজিত হচ্ছে?


🔱 গণেশের আসল মাথা ও হাতির দেহ কোথায় এবং কীভাবে পূজিত হচ্ছে?

✍️ আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু

ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, কাকা-কাকী, মামা-মামী-সহ হিন্দু সমাজের সকলেই ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে বিভিন্ন দেবদেবীর পূজার্চনা করে আসছে। নিজেও নিজের এলাকায় প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হওয়া প্রায় সব কয়টা পূজায় অংশগ্রহণ করে ভক্তিভরে পালন করি। সবচেয়ে বেশি আনন্দ উপভোগ করি আমাদের হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ দূর্গা পূজায়

প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের দিনটি শুরু করি গণেশ পূজা করে। বাংলা নববর্ষের এই দিনে দেবতা গণেশের পূজা করার সময় নিজে নিজেকে প্রশ্ন করি —

“আচ্ছা, এই দেবতা গণেশের হাতির মাথা কেন? আর তাঁর আসল মাথাটা কোথায়? সেই হাতির দেহটাই বা কোথায় গেল?”

পুরোহিতদেরও প্রশ্ন করেছি, কিন্তু পরিপূর্ণ উত্তর পাইনি। তাই নিজেই শিব পুরাণ ঘেঁটে খুঁজে পেলাম এই রহস্যময় কাহিনির কিছু অংশ। আর আমার বড় দাদার (বর্তমানে স্বর্গীয়) মুখে শোনা কিছু অলৌকিক তথ্য মিলিয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি —

🔱 গণেশের জন্ম ও মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পেছনের কাহিনী

দেবী পার্বতী কৈলাসে স্নানের সময় নিজের শরীরের হলুদ দিয়ে তৈরি করলেন এক বালককে — নাম দিলেন ‘গণেশ’। পার্বতীর আদেশে গণেশ স্নানঘরের রক্ষাকর্তা হিসেবে নিয়োজিত হন। একদিন মহাদেব স্নানঘরের দিকে এগোলে গণেশ তাঁকে বাধা দেন, এবং মহাদেবের রাগে গণেশের মাথা ত্রিশূল দিয়ে কেটে ফেলা হয়।

পার্বতীর ক্রোধে সৃষ্টি হতে চলেছিল প্রলয়। মহাদেব ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মার আদেশে, উত্তরমুখী শুয়ে থাকা একটি হাতির মাথা এনে গণেশের দেহে স্থাপন করা হয়। ফলে গণেশ আবার জীবিত হন — তবে এবার তিনি হাতির মাথার একজন দেবতা।

🔱 গণেশের আসল মাথা ও হাতির দেহের পূজার বিধান

দেবী পার্বতী তখনও রাগান্বিত। তিনি বলেন — “গণেশের আসল মাথা ও হাতির দেহের সঠিক মর্যাদা না দিলে আমি শান্ত হব না।” তখন ব্রহ্মা ঘোষণা দেন—

  • ❶ গণেশের হাতির মাথা দেখে কেউ তাঁকে ঘৃণা করতে পারবে না, তিনি হবেন গণপতি
  • সকল পূজার আগে গণেশের পূজা করতে হবে
  • ❸ গণেশের আসল মাথাহাতির দেহ মাটিচাপা দিয়ে রাখা হবে; তার উপর জন্ম নেবে একটি নারিকেল গাছ

সেই গাছের নারিকেল হবে গণেশের আসল মাথা। আর হাতির দেহ মিশে যাবে পৃথিবীর মাটির সাথে — সেই মাটি দিয়ে তৈরি হবে “ঘট”। পূজার শুরুতেই ঘটে জল, আম্রপল্লব, নারিকেল ও বস্ত্র স্থাপন করা হয় — এটিই গণেশের প্রতীকী পূজা

🔱 বিকল্প কাহিনী: শনিদেব ও গণেশ

একটি কাহিনিতে বলা হয়, শনিদেব গণেশকে দেখামাত্র তাঁর দৃষ্টি-শাপের কারণে গণেশের মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে, পূর্বোক্ত নিয়মেই উত্তরমুখী শুয়ে থাকা হাতির মাথা এনে গণেশের দেহে স্থাপন করা হয়।

✅ উপসংহার

তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম — গণেশের আসল মাথা হল নারিকেল, আর হাতির দেহ হল মাটির ঘট। তাই সকল পূজার পূর্বে “মঙ্গলঘট” স্থাপন করে পূজা করা হয় — যা গণেশের প্রতীকী পূজা হিসেবেই গণ্য হয়।

🔔 নোট: ঘটের উপরে আম্রপল্লব, নারিকেল ও বস্ত্র স্থাপন নিয়েও নির্দিষ্ট বিধান আছে — তবে এই লেখায় বিস্তারিত না তুলে পরে আলাদাভাবে তা উপস্থাপন করবো।


লেখক: নিতাই বাবু
পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক
ব্লগ.bdnews24.com

সহযোগিতায়: ChatGPT OpenAI 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী হলো আপনার আমার গর্ভধারিণী মা

গাঁজা বা সিদ্ধি: ইতিহাস, উপকার ও ক্ষতি

মা-বাবার আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ে ও কিছু অলৌকিক ঘটনা