চোখের সামনে নিজেকে পুড়তে দেখেছি

 

🔥 চোখের সামনে নিজেকে পুড়তে দেখেছিলাম 🔥

একদিন ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমটা যেন ছিল কোনো নরম হাতের আশীর্বাদ, শান্তির চাদরে মোড়ানো এক অচেনা যাত্রা। ঘুমের ঘোরে আমি এমন এক স্বপ্নে প্রবেশ করলাম, যেটা আমার পূর্বজীবনের কোনো গল্প নয়—এ যেন ভবিষ্যতের, বা তারও ওপারে কোনো অলিখিত অধ্যায়।

স্বপ্নে আমি আনন্দে ভেসে বেড়াচ্ছিলাম। হালকা আলো, শীতল বাতাস, গায়ে গায়ে নরম তরঙ্গের মতো ভেসে আসা হাসির ছায়া—যেন স্বর্গের সীমানায় হেঁটে বেড়াচ্ছি আমি। না কোনো দুঃখ, না কোনো ক্লান্তি, না কোনো সময়ের গলা টিপে ধরা বাঁধন। কেবল প্রশান্তি আর মুক্তির গান।

এই অপার্থিব অনুভবের মাঝে হঠাৎই কানে আসে এক কান্নার শব্দ। খুব পরিচিত। ঘরের ভেতরের কেউ যেন কাঁদছে—চিৎকার করে বলছে, "ওঠো না কেন? শুনছো না? আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছো?" আমি চোখ ফেরালাম। দেখি আমারই ঘরের মেঝেতে আমি শুয়ে আছি—নিস্তব্ধ, নিশ্চল। আমার চারপাশে পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে কাঁদছে।

আমি সবই দেখছি, শুনছি, কিন্তু আমার শরীরে ফিরতে পারছি না। যেন সেই দেহ হয়ে উঠেছে একটি শূন্য ঘর, যার প্রতিটি দরজা-জানালা বন্ধ। আমি অনেক চেষ্টা করেও ভেতরে ঢুকতে পারছি না। আত্মা যেন ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে—দেখছে, কাঁদছে, ডাকছে, কিন্তু তার কণ্ঠ কেউ শুনছে না।

এরপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো শ্মশানে। আমি পেছনে পেছনে চললাম—নীরবে, চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল বাতাসে। শ্মশানে খড়ের উপর আমার দেহ রাখা হলো। আগুন ধরানো হলো। আমার শরীর জ্বলতে লাগল। ধোঁয়া উঠছে আকাশে—তাতে মিশে যাচ্ছে আমার পূর্বপরিচিত অস্তিত্ব। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম, আর কাঁদছিলাম।

সবাই হরিবোল বলতে বলতে ফিরে গেল। শ্মশান খালি হলো। আমি একা রইলাম। এরপর কেটে গেল এগারো দিন। আমি একা একা ঘুরে বেড়ালাম—বাড়ির আশেপাশে, ছাদে, বারান্দায়, পুকুরপাড়ে। যেখানে আমার জীবনের স্মৃতি, সেখানেই আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি। কেউ আমাকে দেখতে পায় না, শুনতেও না।

একমাত্র মা প্রতিদিন দরজার পাশে বসে থাকতেন—চোখে এক অদ্ভুত বিস্ময়, যেন কিছু অনুভব করছেন, কিন্তু বলছেন না কিছুই। একসময় পুরোহিত এলেন, শ্রাদ্ধ হলো, পিণ্ড দান হলো। সবাই বলল, “তাঁর আত্মা এখন মুক্ত।” কিন্তু আমি তখনও বাইরে। দেহহীন, অথচ অনুভবশীল, এক একাকী আত্মা।

তখন বুঝলাম—শরীর পোড়ালেই আত্মা মুক্ত হয় না। যদি সে নিজে না পারে ফিরতে, যদি কেউ তার জন্য দরজা না খোলে, সে রয়ে যায়... ছায়ার মতো। আমার ঘর বদলে গেছে, জিনিসপত্র বদলে গেছে, মানুষ ভুলে গেছে। কিন্তু আমি আজও আছি—অদৃশ্য হয়ে, এক গভীর অপেক্ষায়।

আমি ছিলাম, আমি নেই। তবু আমি আছি—তোমার নিঃশ্বাসে, জানালার ফাঁকে, সন্ধ্যার আলোছায়ায়। আমি ফিরে আসতে চাই। কিন্তু কেউ আর আমার জন্য সেই ঘরের দরজা খুলে না।


✍️ লেখক: নিতাই বাবু

নাগরিক সাংবাদিক— ব্লগ ডট বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
🔗 ব্লগ:   nitaibabublog.blogspot.com

📚 প্রিয় পাঠক, আমার আরও কিছু ব্লগ রয়েছে, যেখানে নিয়মিত লেখালেখি করি। আপনি চাইলে সেগুলোতেও ঘুরে আসতে পারেন—

আপনাদের পাঠই আমার প্রেরণা। সময় পেলে ঘুরে আসুন, মন্তব্য করুন, আর সাথে থাকুন! ❤️

পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

Facebook Facebook Twitter Twitter WhatsApp WhatsApp Email Email

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী হলো আপনার আমার গর্ভধারিণী মা

গাঁজা বা সিদ্ধি: ইতিহাস, উপকার ও ক্ষতি

মা-বাবার আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ে ও কিছু অলৌকিক ঘটনা