হিন্দুধর্মে চার যুগ

 

🕉️ হিন্দুধর্মে চার যুগ 🕉️

এই কলিযুগে মানুষের ধর্ম কী? যুগধর্ম কী?

যুগধর্ম হল যুগের ধর্ম। হিন্দুধর্মে চারটি যুগ রয়েছে যথাঃ— সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ ও কলিযুগ। বর্তমান সময় কলিযুগের অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেক যুগে ভগবানকে সন্তুষ্টি বিধানের জন্য আলাদা ভাবে ধর্মানুষ্ঠান করা হত।

এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতের (১২/৩/৫২ শ্লোক)শুকদেব গোস্বামী পরিক্ষিত মহারাজকে বলেন—

কৃতে যয্ঞায়তো বিষ্ণুং ত্রেতায়াং যজতো মখৈঃ।
দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌ তদ্ধরিকীর্তনাত্‌॥

অর্থাৎ, সত্যযুগে বিষ্ণুকে ধ্যান করে, ত্রেতাযুগে যজ্ঞের মাধ্যমে যজন করে এবং দ্বাপরযুগে অর্চনাদি করে যে ফল লাভ হত, কলিযুগে কেবলমাত্র “হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র” কীর্তনে সেই সকল ফল লাভ হয়।

সত্যযুগ

যুগধর্ম ছিল ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান। বৈদিক শাস্ত্রমতে ধর্মের চারটি স্তম্ভ — সত্য, দয়া, তপ, শৌচ — সবই বর্তমান ছিল। মানুষের আয়ুষ্কাল ছিল ১ লক্ষ বছর। হাজার হাজার বছর ধ্যান (তপস্যা) করে ভগবানকে লাভের চেষ্টা হত।

ত্রেতাযুগ

যুগধর্ম ছিল যজ্ঞ। যজ্ঞে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে ভগবানকে আহ্বান করা হত। মানুষের আয়ু ছিল ১০ হাজার বছর। ধর্মের তিন ভাগ ও অধর্মের এক ভাগ ছিল।

দ্বাপরযুগ

যুগধর্ম ছিল অর্চন। মানুষের আয়ু ছিল ১ হাজার বছর। ধর্ম ও অধর্ম সমপরিমাণ ছিল। মানুষ মূর্তিপূজা, ভক্তিসাধনার মাধ্যমে ভগবানকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করত।

কলিযুগ

যুগধর্ম হচ্ছে নামসংকীর্তন। কলিযুগে ধর্মের এক ভাগ এবং অধর্মের তিন ভাগ। মানুষ অল্প আয়ু, অল্প মেধা, কলহপ্রিয় ও অধার্মিক। কিন্তু কলিযুগে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ— হরিনামসংকীর্তনের মাধ্যমে সহজেই ভগবানকে লাভ করা যায়

চৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে—

কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার।
নাম হৈতে হয় সর্বজগৎ নিস্তার॥

এই কলিযুগে ভগবানের দিব্যনাম "হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র" হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অবতার। এই নাম গ্রহণ করলে যে কেউ সরাসরি ভগবানের সান্নিধ্য পেতে পারে। শুধু নামসংকীর্তনের মাধ্যমে মুক্তি লাভ সম্ভব— যা অন্য যুগে বহু কঠোর সাধনায়ও সহজে সম্ভব ছিল না।

কলিযুগে অধর্ম বেশি থাকলেও, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর উদারতার ফলে পতিত জীবনরাও সহজে ভগবানকে লাভ করছে। কলির প্রথম সন্ধ্যায় তিনি নবদ্বীপে আবির্ভূত হয়ে সর্বত্র হরিনাম দান করেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেন—

পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম
সর্বত্র প্রচার হইবে মোর এই নাম।

✍️ লেখক পরিচিতি: এই লেখাটি প্রকাশ করেছেন নিতাই বাবু, যিনি bdnews24 ব্লগের পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক এবং বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতাকে নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন।

📢 পাঠকদের প্রতি অনুরোধ: যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে, তাহলে মন্তব্য করতে এবং ব্লগটি ফলো করতে ভুলবেন না। হরিনাম সংকীর্তনের গুরুত্ব ছড়িয়ে দিন আপনার বন্ধুদের মাঝে।

পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

Facebook Facebook Twitter Twitter WhatsApp WhatsApp Email Email

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী হলো আপনার আমার গর্ভধারিণী মা

গাঁজা বা সিদ্ধি: ইতিহাস, উপকার ও ক্ষতি

মা-বাবার আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ে ও কিছু অলৌকিক ঘটনা