পোস্টগুলি

সেবক ব্রিজ— পাহাড়, নদী ও অদেখা সিকিম

ছবি
শিলিগুড়ি থেকে বীরপাড়া যাবার পথে যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য চোখে পড়ে, তার অন্যতম নিদর্শন হল সেবক রোড এবং তার বুকে গড়া সেবক ব্রিজ । এই জায়গাটি শুধু একটি যাতায়াতের মোড় নয়, বরং উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও হিমালয়ের পাদদেশীয় এলাকার এক গভীর সংযোগস্থল। সেবক রোড শুরু হয় শিলিগুড়ির ব্যস্ত শহরাঞ্চল থেকে, এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই নগরের কোলাহল পেছনে ফেলে মানুষ প্রবেশ করে প্রকৃতির শান্ত নিসর্গে। এই পথের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ স্থান হলো সেবক ব্রিজ। এটি তিস্তা নদীর উপর নির্মিত এক চমৎকার সেতু, যা শুধু প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, প্রাকৃতিক দৃশ্যের দিক থেকেও এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। সেতুটির এক পাশে রয়েছে সিকিমে যাবার পথ , যা পাহাড় বেয়ে উঠে গেছে উপরের দিকে। আর মাঝ বরাবর, সেবক ব্রিজের এক কোণ ঘেঁষে চোখে পড়ে এক অনুচ্চ পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা এক কালীমন্দির । মন্দিরটির অবস্থান এমন যে, মনে হয় যেন মা কালীর কৃপাদৃষ্টি সারা সেবক রোড ও ব্রিজজুড়ে বিস্তৃত। ভক্তরা প্রায়ই গাড়ি থামিয়ে মন্দিরে পুজো দিয়ে যান, সেখান থেকে চারপাশের প্রকৃতি উপভোগ করেন। পাহাড়, নদী ও মন্দির—এই ত্...

সাধু: বাঙালির অন্তর্মূল্য ও উভয়তার দর্শন

ছবি
✍️ নিতাই বাবু ভাষা, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের বিষয়ে আমার একটা গভীর আগ্রহ বহুদিনের। “আমরা কে?”, “আমাদের স্বভাব কোথা থেকে এসেছে?”, “বাংলা শব্দের ভেতরে কী ইতিহাস লুকিয়ে আছে?” — এই প্রশ্নগুলো আমাকে বারবার নাড়া দেয়। সম্প্রতি রবি চক্রবর্ত্তী ও কলিম খানের 'শব্দার্থ পরিক্রমা' পড়ে মনে হলো, আমাদের শব্দগুলো শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এরা একেকটি জীবনদর্শন। এই ভাবনা থেকেই ‘সাধু’ শব্দটির দিকে মন গেল। কী আশ্চর্য—একটি ছোট্ট শব্দের মধ্যে কতটা সমাজতত্ত্ব, দর্শন ও ইতিহাস গাঁথা! সেই উপলব্ধিকে কেন্দ্র করেই এই প্রবন্ধটি রচনা করেছি। ভাবনার গঠন ও ভাষার বাঁধন দিতে আমার ডিজিটাল সহযোগী ‘চ্যাটজিপিটি’ পাশে ছিল। তবুও এটি আমার মনের কথা, আমার আত্মান্বেষণেরই প্রকাশ। আশা করি, পাঠক হৃদয়েও এই লেখাটি একধরনের চিন্তার স্পন্দন তুলবে। ভালো লাগলে মন্তব্য জানাবেন, মতামত জানাবেন—কারণ বাংলা ভাষা আর বাঙালিয়ানা নিয়ে আলোচনা যত বাড়বে, ততই আমরা নিজেদের চিনতে পারব। উভয়ের মহিমা : ‘সাধু’ শব্দার্থের সন্ধানে — অনুপ্রেরণায়: রবি চক্রবর্ত্তী ও কলিম খান ‘সাধু’—শব্দটি উচ্চারণ করলেই চোখে ভেসে ওঠে শান্ত মুখ, ত্যাগ...

মা-বাবার আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ে ও কিছু অলৌকিক ঘটনা

ছবি
        আমার একমাত্র মেয়ে, অনিতা রাণী বিশ্বাস।  আমার বিবাহের তারিখ, ১৪ জুন ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ, পহেলা আষাঢ়, ১৩৯৩ বঙ্গাব্দ। বিয়ে করেছিলাম, মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখাঁন থানাধীন সুবচনী সংলগ্ন নয়াবাড়ি গ্রামের এক দরিদ্র হিন্দু পরিবারের মেয়ে।  আমার বিয়ের পর প্রায় আড়াই বছর পর ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে আমার একমাত্র মেয়ে অনিতা'র জন্ম হয়। মেয়ে অনিতা ভূমিষ্ঠ হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটির ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে। তখন আমার গর্ভধারিণী মা জীবিত ছিলো। বাবা ছিলেন পরপারে।  আমি তখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ১০নং ওয়ার্ড গোদনাইলস্থ কো-অপারেটিভ মহিউদ্দিন স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিলে নামমাত্র বেতনে চাকরি করি। সন্তান  ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর পেয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার স্ত্রী হাসপাতালের সিটে সন্তান পাশে রেখে শুয়ে আছে। মা স্ত্রীর সিটের পাশে বসা। আমি সামনে যাওয়ার সাথে সাথে মা হেসে বললো, "এতক্ষণে এলি? আয় দেখ তোর সুন্দর একটা মেয়ে হয়েছে।"  মেয়ের কথা শুনেই আমি কেঁদে ফেললাম! আমার দু'চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছিল। মা আমার কাঁদা দেখে এক ধমক দিয়ে বললো, "এ-ই, কাঁদিস কেন?...

মা-বাবার আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ে ও অলৌকিক অভিজ্ঞতা

ছবি
🌺 মা‑বাবার আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ে ও অলৌকিক অভিজ্ঞতা মেয়ে বড় হয়েছে, এবার তার বিয়ের সময়। মা‑বাবা নেই, কিন্তু তাঁদের স্মৃতি, আশীর্বাদ—সবসময় আমার চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। বিয়ের দিনগুলোয় তাঁদের অভাব অনেক বেশি অনুভব করছিলাম। অবশেষে সেই বিশেষ দিনটি এলো। রাত ১০টা ৩০ মিনিট — নারায়ণগঞ্জ সিটির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, গোদনাইল, চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্‌‑এর আটপাড়ায় বরযাত্রী পৌঁছাল। ঢাক‑ঢোল, সানাই, উৎসবের উন্মাদনা—সবই মিলেমিশে তৈরি করল এক উৎসবমুখর পরিবেশ। 🌧️ অলৌকিক অভিজ্ঞতা আমাদের এলাকায় ছিল প্রতিদিন লোডশেডিং , সঙ্গে অঝোর বৃষ্টি । তবে আশ্চর্যজনকভাবে, বিয়ের আগের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে বিয়ের পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত একবারও বিদ্যুৎ যায়নি ও বৃষ্টি হয়নি! সকালে শান্তিতে বাসি বিবাহের সব রীতি সম্পন্ন হলো। বেলা ১১টায় বরযাত্রী ও নববধূ বিদায় নিলেন। আর ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চলে গেল, সঙ্গে শুরু হলো একটানা বৃষ্টি! যেন আকাশও আমাদের মেয়েকে বিদায় জানিয়ে কেঁদে উঠলো। এই সব দেখে অনুভব করলাম—এ সবই ছিল আমার মা‑বাবার অদৃশ্য আশীর্বাদ। তাঁরা শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা ও আশীর্বাদ যেন আকাশে, বা...

গাঁজা বা সিদ্ধি: ইতিহাস, উপকার ও ক্ষতি

ছবি
গাঁজা বা সিদ্ধি: ইতিহাস, উপকার ও ক্ষতি গাঁজা গাছের ছবি — শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভূমিকা গাঁজা বা সিদ্ধি একটি বহু আলোচিত উদ্ভিদজাত নেশাদ্রব্য, যা আমাদের সমাজে নানা কারণে পরিচিত। কেউ এটিকে চিকিৎসার উপকরণ হিসেবে দেখে, আবার কেউ মাদকদ্রব্য হিসেবে ভয় পায়। যুগে যুগে এটি ধর্মীয়, আয়ুর্বেদিক ও আধুনিক চিকিৎসা—সব ক্ষেত্রেই নানা ভাবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। আজ আমরা জানব এর ইতিহাস, উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে। গাঁজা বা সিদ্ধির ইতিহাস গাঁজার ব্যবহার প্রাচীন ভারত, চীন, পারস্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার বছর আগে শুরু হয়। বৈদিক যুগে হিন্দু ধর্মে শিবের ভক্তরা ভাং (গাঁজাজাত পানীয়) সেবন করতেন। চৈনিক প্রাচীন গ্রন্থেও ক্যানাবিস উদ্ভিদের চিকিৎসা ব্যবহার উল্লেখ রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতবর্ষে গাঁজার উপর কর বসানো হতো এবং অনুমোদিত বিক্রি চলত। তবে কালের প্রবাহে এটি নেশাদ্রব্য হিসেবে কুখ্যাত হয়ে ওঠে এবং বর্তমানে অনেক দেশে নিষিদ্ধ মাদকের তালিকায় রয়েছে। গাঁজার উপকারিতা ব্যথা উপশম: গাঁজার উপাদান CBD দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ...

আদমজী জুট মিলের ইতিহাস ও বর্তমান আদমজী ইপিজেড

ছবি
আদমজী জুট মিলের ইতিহাস ও বর্তমান আদমজী ইপিজেড ভূমিকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে আদমজী জুট মিল এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের নাম। এক সময়ের বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকল, আদমজী ছিল কেবল একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান নয়—বরং জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এই মিলের ভূমিকা ছিল অনন্য। প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য: আদমজী পরিবারের উদ্যোগে ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই মিল। উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব বাংলার পাটকে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরি করা এবং এশিয়া মহাদেশে পাটশিল্পে নেতৃত্ব দেওয়া। আদমজী জুট মিল: এক ইতিহাস প্রতিষ্ঠা: ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শুরু: ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে উৎপাদন প্রথম ইউনিটে ছিল ১৭০০ হেসিয়ান ও ১০০০ সেকিং লুম চাকরি করতেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক এশিয়ায় খ্যাতি ও স্বর্ণযুগ ১৯৬০-৭০ এর দশকে আদমজী জুট মিল এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ পাটকল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। বৈদেশিক রপ্তানিতে এই মিল একাই আনে কোটি কোটি ডলার। ব্রিটেন, তুরস্ক, জার্মানি, জাপান সহ ব...

গণেশের আসল মাথা ও হাতির দেহটা কোথায় এবং কীভাবে পূজিত হচ্ছে?

ছবি
🔱 গণেশের আসল মাথা ও হাতির দেহ কোথায় এবং কীভাবে পূজিত হচ্ছে? ✍️ আমি  একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, কাকা-কাকী, মামা-মামী-সহ হিন্দু সমাজের সকলেই ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে বিভিন্ন দেবদেবীর পূজার্চনা করে আসছে। নিজেও নিজের এলাকায় প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হওয়া প্রায় সব কয়টা পূজায় অংশগ্রহণ করে ভক্তিভরে পালন করি। সবচেয়ে বেশি আনন্দ উপভোগ করি আমাদের হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ দূর্গা পূজায় । প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ ের দিনটি শুরু করি গণেশ পূজা করে। বাংলা নববর্ষের এই দিনে দেবতা গণেশের পূজা করার সময় নিজে নিজেকে প্রশ্ন করি — “আচ্ছা, এই দেবতা গণেশের হাতির মাথা কেন? আর তাঁর আসল মাথাটা কোথায়? সেই হাতির দেহটাই বা কোথায় গেল?” পুরোহিতদেরও প্রশ্ন করেছি, কিন্তু পরিপূর্ণ উত্তর পাইনি। তাই নিজেই শিব পুরাণ ঘেঁটে খুঁজে পেলাম এই রহস্যময় কাহিনির কিছু অংশ। আর আমার বড় দাদার (বর্তমানে স্বর্গীয়) মুখে শোনা কিছু অলৌকিক তথ্য মিলিয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি — 🔱 গণেশের জন্ম ও মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ...