পোস্টগুলি

আত্ম-উপলব্ধি লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

জীবনের গল্প-২৩

ছবি
                   শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-২২ শেষাংশ↓↓ কানাইর সাথে যাবার পর-ই নিজ চোখে দেখার ভাগ্য হলো। যেমনটা দেখলাম, কিছুক্ষণ আগে কানাইর বন্ধু প্রদীপদের বাড়িতে আসার পর।  জীবনের গল্প-২৩ আরম্ভ↓↓ কানাইর বন্ধু প্রদীপদের বাড়িতে আসার পর যা দেখা  গেলো, তা এই ভারতে পা রাখার আগে অনেক শুনেছি। কিন্তু বিশ্বাস করিনি। যা ভারতে আসার পর বিশ্বাস করতে হলো। বাংলাদেশে একজন গরিবের বাড়িতেও যদি কোনও অতিথি আসে তাহলে কতনা সমাদর করে।  অতিথির জন্য রাত আর দিনের হিসাব না করে অতিথিকে সমাদর করাটাই বড় বিষয় হয়ে দাড়ায়। আর এখানে রাত হয়েছে বলে যত যন্ত্রণা! কিছু খাও আর না খাও, সকালবেলা চলে যাও!  এসব দেখে আমি ভাবছিলাম, যার কাছে যাব, সে যদি এমন করে?  তাহলে কোথায় যাব? কানাইর কাছেও ক’দিন থাকব! বড় দিদির বাড়ি গেলে, বড় দিদি যদি আমাকে দেখে বিরক্ত হয়? তাহলে যাবো কোথায়? চাকরি যদি মনোমত না হয়, তাহলে?  এমন আরও অনেক অনেক প্রশ্ন নিয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম! একসময় সকাল হল। সময় তখন ভোর ৫টা। সূর্য মামা তখনও উঁকি দেয়নি। আমারা অনে...

জীবনের গল্প-২২

ছবি
                    শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-২১ শেষাংশ↓↓ কানাইর সাজেশন মাথায় রেখে আমি ভয়ে ভয়ে এদিক সেদিন চেয়ে রেলস্টেশনের বাইরে যাচ্ছিলাম।  জীবনের গল্প-২২ আরম্ভ↓↓ বনগাঁ রেলস্টেশন থেকে খুব ভয়ে ভয়েই হেঁটে যাচ্ছিলাম! ভয় হচ্ছিল এই কারণে, যদি রেলস্টেশনের গেইটে থাকা গার্ড আমাকে দেখে কিছু জিজ্ঞেস করে? আর যদি রেলস্টেশনের বাইরে ভারতের বাটপারা আমার কষ্টের টাকা ছিনিয়ে নেয়! তাহলে কানাই তো রেলস্টেশনের ভেতরে। আমার ওইরকম বিপদ থেকে কানাই আমাকে কীভাবে রক্ষা করবে? এসব বাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে একসময় রেলস্টেশনের বাইরে গেলাম। অবশ্য রেলস্টেশনের বাইরে যাবার আগে কানাই আমাকে বলেছিল, “বর্ডার থেকে যেই টাকা বদল করে দিয়েছি, সেই টাকা থেকে কিছু টাকা আলাদা করে রাখ। সব টাকা বাইর করার দরকার নেই। কোনও বাটপার দেখলে তোর পেছলে লাগবে। ভারতের বাড়ি, টাকার খুব দাম!” আমি কানাইর কথামত কিছু টাকা সামনের পকেটে রাখলাম। আর বাদবাকি টাকা প্যান্টের ভেতরের পকেটে রাখলাম। ভগবানকে ডাকতে ডাকতে গেইট থেকে একটু দূরে থাকা একটা চা-বিস্কুটের দোকানে গেলাম। মাত্র...

জীবনের গল্প-২১

ছবি
                     শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-২০ শেষাংশ↓↓ কানাই আমার কথা শুনে বলল, “ঠিক আছে, আর কোনও টেনশন নেই। এবার যাবার পালা।” জীবনের গল্প-২১ আরম্ভ↓↓ দুইদিন পরই ভারত যাবার দিন-তারিখ ঠিক করা হলো। নারায়ণগঞ্জ থেকে রওনা দিবো, ২৭ চৈত্র ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ, ১০ এপ্রিল ১৯৯৩ ইং রবিবার। রাত পোহালেই রবিবার। সকালবেলা বড়দা’র বাসায় নাস্তা সেরে জামাকাপড় পড়ে রেডি হচ্ছিলাম।  জামাকাপড় পড়তেই বড়দাদা জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যাবি?” আমি বললাম, “আমি কানাইদের বাসায় যাচ্ছি। আজই মনে হয় রওয়ানা দিতে পারি। আমার জন্য আশীর্বাদ রাখবি।” বড়দাদা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল, “এখনই ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিবি নাকি?” বললাম, “না, যেতে যেতে হয়তো সন্ধ্যা হতে পারে। তো একটু আগেই যাচ্ছি, কানাইর সাথে কিছু কাজ আছে।”  আমার কথা শেষ হলে বড়দাদা আমার হাতে ৫০০/=টাকা দিলে বললো, “যা, ভগবানকে স্মরণে রেখে দেখে-শুনে চলবি।”  অবশ্য বড় দাদাকে এর আগেও ভারতের ব্যাপারে বিস্তারিত খুলে বলেছিলাম। তাই হয়তো বড়দাদা আগে থেকেই আমার জন্য কষ্ট করে হলেও ৫০০/...

জীবনের গল্প-২০

ছবি
                     শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-১৯ শেষাংশ↓↓ তখন কালীগঞ্জ শুভাঢ্যা ইউনিয়ন এলাকার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিলো যে, ভাড়া বাড়ি থেকে প্রাণভয়ে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে মিলের ভেতরে থাকতাম। মিলের ভেতরে  অন্তত তিন-চার দিন সপরিবারে অবস্থান করেছিলাম।  জীবনের গল্প-২০ আরম্ভ↓↓ ভারতের বাবরি মসজিদ নিয়ে সেসময়ে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা এখানে তুলে ধরলাম। ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ কিন্তু ভারতীয় উগ্রবাদী হিন্দু সম্প্রদায় ধংস করে ১৯৯০ সালে অক্টোবরের শেষদিকে।  আমি তখন নারায়ণগঞ্জ গোদনাইল এলাকায় মহিউদ্দিন স্পেসালাইজড টেক্সটাইল মিলে। বাসাও ছিলো মিলের সাথেই। সেসময় ভারতের অযোদ্ধায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস করায় বাংলাদেশী মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে সংগঠিত হয় দাঙ্গা।  তখন বাবরি মসজিদ ভাঙার জেরে এদেশের হিন্দুদের উপর অক্টোবর থেকে শুরু করে নভেম্বরের ২-৩ তারিখ পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে দমনপীড়ন চলতে থাকে। কিন্তু আশার কথা হলো, তখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাশহরে জ্বালাও পোড়াও ধর মার হলেও, নারায়ণগঞ্জ জেলায় তেমন ভ...

জীবনের গল্প-১৯

ছবি
                    শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-১৮ শেষাংশ↓↓ এরপর থেকে চলতে লাগলো, স্বামী-স্ত্রীর অভাবের সংসার। সাথে আছে অভাগী মা আর বোন মরা এক এতিম ভাগ্নী। জীবনের গল্প-১৯ আরম্ভ↓↓ তারপর থেকে মা আর বোন মরা ভাগ্নি-সহ স্বামী স্ত্রীর সংসার খুব সুন্দভাবে চলতে লাগলো। আমি ওয়েল টেক্স মিল থেকে মাসে যেই টাকা বেতন পেতাম, খেয়ে-দেয়ে তা থেকে বেশকিছু টাকা আমার আয় থাকতো।  নন্দিপাড়া যেই বাড়িতে ভাড়া থাকতাম, সেই বাড়িতে আরও কয়েকটা ভাড়াটিয়া ছিলো। তাদের মধ্যে কয়েকজন ভাড়াটিয়া ছিলো ব্যাবসায়ী। আর কয়েকজন ছিলো আমার মতন দিনমজুর। সেসব ভাড়াটিয়াদের সেথে পাল্লা দিয়েই চলছিলো আমাদের ছোট সংসার।  সংসারে কোনও কিছু নিয়ে তেমন কোন কথা কাটা-কাটিও হতো না। থাকলে খেতো, না থাকলে পেট মাটিতে চাপা দিয়ে শুয়ে থাকতো। কিন্তু ঝগড়াঝাটি আর নাই নাই হতো না। সময়টা তখন ১৯৮৬ সালের শেষদিকে। সেসময় বাংলাদেশি শাটিং শ্যুটিং কাপড়ের অনেক চাহিদা ছিলো। মিলেও তেমনই ছিলো প্রচুর কাজ। কাজের এতো চাপ ছিলো যে, অনেক সময় সারারাত আমাকে মিলে ওভারটাইম করতে হত...

জীবনের গল্প-১৮

ছবি
                     শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-১৭ শেষাংশ↓↓ খুব সুন্দরভাবে আমি একাই নয়াবাড়ি গ্রামের ঠাকুরবাড়িতে জামাই-আদরে দুইদিন থেকে নারায়ণগঞ্জ ফিরে আসি। জীবনের গল্প-১৮ আরম্ভ↓↓ বিক্রমপুর সুবচনী নয়াবাড়ি থেকে বাসায় আসার পর আমার বড় দিদি জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় গিয়েছিলি।” সত্যি কথাই বললাম, “বিক্রমপুর গিয়েছিলাম।« বড় দিদি জিজ্ঞেস করলো, “কেন গিয়েছিলি? ওখানে কি মেয়ে পছন্দ করেছিস? মেয়ে পছন্দ হয়ে থাকলে বল, আমরা দেখতে যাবো।” বললাম, “সময় হোক, পরে বলবো।” দিদি আর কিছু বললো না। নিজের বাসায় চলে গেলো। এরপর মা বললো, “আমি একটা মেয়ের কথা শুনেছি। মেয়েটি নাকি সুন্দর! মেয়ে সুন্দর হলে তোর সাথে মানাবে খুব!”  মাকে জিজ্ঞেস করলাম, “মেয়েদের বাড়ি কোথায়?”  মা বললেন, “মেয়েদের বাড়ি নাকি নরসিংদী। তোর জোৎস্না দিদির জামাই যেখানে আবার বিয়ে করেছে, সাখানে। মেয়ে পক্ষ থেকে বেশকিছু টাকা-পয়সাও নাকি দিতে পারবে।” আমার ওই ভগ্নিপতির নাম সুনীল। মাকে বললাম, “আমার বোন মরা ভাগ্নিটাকে পূজা উপলক্ষে একটা সুতার বাট্টা দিতে পারে না, অথ...

জীবনের গল্প-১৭

ছবি
                    শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-১৬ শেষাংশ↓↓ কালামের মা আমাদের ঠাকুরবাড়ির গল্প শুনিয়ে শুয়ে থাকতে বললে, আমরা আগের রাতের মতো তিনজন একসাথে শুয়ে থাকি।  জীবনের গল্প-১৭ আরম্ভ↓↓ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি ঠাকুরবাড়ির ছোট মেয়েটা কালামের বড় ভাবীর সাথে বসে বসে গল্প করছে। আমাকে দেখেই চলে যাওয়া প্রস্তুতি নিতেই, কালামের বড় ভাবী ধমক দিয়ে বসতে বললো। মেয়েটিও চুপচাপ বসে থাকলো।  কানাই আমার আগেই ঘুম থেকে উঠে আম পাতা মুড়িয়ে কালামদের উঠানে দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করছিল। আমাকে দেখেই কানাই মেয়েটির দিকে  আমাকে ইশারা দিয়ে দেখালো। আমিও কানাইকে হাতে ইশারা দিয়ে কাছে ডাকলাম। কানাই আমার সামনে আসলে, আমি মেয়েটির সাথে কথা বলার জন্য কানাইকে বললাম। কানাই মেয়েটিকে কিছু না বলে আমাকেই মেয়েটির সাথে কথা বলতে বললো। আমি কানাই উপর রাগ না করে মেয়েটির সামনে গিয়ে ভাবীকে বললাম, “ভাবী, আমাদের জন্য কোনকিছুর আয়োজন করবেন না। কিছুক্ষণ পর তো চলেই যাচ্ছি।” কালামের বড় ভাবী বললো, “সকালের নাস্তা রেডি করছি ভাই। নাস্তা না খেয়ে তো আর যেতে পার...

জীবনের গল্প-১৬

ছবি
                    শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) জীবনের গল্প-১৫ শেষাংশ↓↓ আমার কথায় কানাই সালাম ভাইকে ডেকে নিয়ে গেল একটু আড়ালে। কিছুক্ষণ পর কানাই আমার কাছে এলো। জীবনের গল্প-১৬ আরম্ভ↓↓ কানাইকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিরে কানাই, সালাম ভাই কী বললো?” আমার কথার উত্তরে কানাই বললো, “সালাম দাদা বললো, তোকে এই গ্রামেই বিয়ে করাবে, বুজলি।” বললাম, “বলে কী? তো মেয়ে কোথায়? মেয়ে দেখাতে বল! যদি আমার পছন্দ হয় তবে বিয়ে করতেও পারি! আমার মায়ের খুবই কষ্ট হচ্ছে রে কানাই। বিয়েটা তাড়াতাড়িই করতে হবে।” কানাই বললো, “মেয়ে তো কয়েকবারই এখানে বসে বসে দেখেছিস। এবার বল, পছন্দ হয়েছে কিনা?” আমি কানাইর কথায় অবাক হয়নি! কেন হয় নি? সত্যিই তো, মেয়েতো কয়েকবারই দেখেছি। কিন্তু ভালো করে তো দেখতে পারলাম না। আচ্ছা আবার আসুক!  মনে মনে এই বলেই বেশ কিছুক্ষণ ঘাটে বসে থাকতাম, আবার দেখার আশায়। এরমধ্যেই কালাম বাজার থেকে এসে হাজির হল। কালাম পুকুর ঘাটে এসেই বললো, “ওস্তাদ বাড়ি চলেন খাবেন!” কালামকে খুবই ব্যস্ত দেখা যাচ্ছিল! সেসময় কালাম সত্যিই ব্যস্ত ছিলো, টেনশনও ছিলো। কালামের ব্য...