এখনো বেঁচে আছি… কারণ এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি!
📜 এখনো বেঁচে আছি… কারণ এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি!
১৯৭১ সালের সেই বিভীষিকাময় সময় আমি নিজের চোখে দেখেছি। প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত—আগুন, রক্ত আর কান্নায় মোড়া ছিল আমাদের চারপাশ। তখন আমি ছোট হলেও, মন যে বড় হয়ে গিয়েছিল—তা এখন অনুভব করি।
সেই সময়, আমরা জানতাম শত্রু কে। তারা ছিল বিদেশি হানাদার। তাদের রাইফেলের মুখে, ট্যাংকের চেইনে, আমাদের স্বপ্ন মুছে দিচ্ছিল। তবু বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল এ দেশের সাধারণ মানুষ।
আর আজ? আজ আমি ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে দেখি, সেই রাইফেল এখন নিজের দেশের ছেলেমেয়েদের দিকে তাক করে আছে। সেই ট্যাংক নয়, আজকের নাম ‘রাষ্ট্রযন্ত্র’—আর তার চাকার নিচে পিষ্ট হচ্ছে স্বাধীন দেশের মানুষ।
পুলিশ, র্যাব, বিশেষ বাহিনী—আজ যারা গুলি ছোড়ে নিজের দেশেরই তরুণদের বুকে।
কী নিদারুণ ব্যথা! যে স্বাধীনতার জন্য এ জাতি লাখো প্রাণ দিয়েছিল, সেই দেশেরই বাহিনীগুলো আজ নিজের দেশের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে নিঃশেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছে।
আরও ভয়াবহ হলো—আজও আছে সেই ৭১-এর স্বাধীনতা বিরোধী মানসিকতার কিছু হিংস্র মানুষ, যারা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের নীরব অথবা সক্রিয় সহযোগী। আজ তারা সংবিধান, সংবেদনশীলতা, মানবিকতা—সব ভুলে গিয়ে দাঁড়ায় অন্যায়ের পক্ষে।
২০২৪ সালে একটি পরিবর্তনের আশ্বাস এসেছিল। কিছু মানুষ রক্ত দিয়ে তা এনেছিল। ভেবেছিলাম—দেশ বাঁচবে। কিন্তু এখন দেখি, সেই স্বপ্ন অনেকটাই ভেঙে গেছে।
নতুন পোশাক, নতুন মুখ, কিন্তু একই পাপ। একই অন্যায়, অন্য রঙে রাঙানো।
আমরা কি আবার ১৯৭১-এর মত ভয়াবহতার দিকে হাঁটছি? তফাত শুধু এটাই—তখন শত্রু বাইরে ছিল, আর এখন ভিতরেই।
আমার চোখের সামনে আবার পুড়ছে স্বপ্ন, হারিয়ে যাচ্ছে সন্তানেরা, মায়েরা বুক চাপড়ে কাঁদে, মানুষ গুম হয়, নিখোঁজ হয়—তাদের গল্প কেউ বলে না।
এই বেঁচে থাকা তাই প্রতিরোধের অপেক্ষা। এই নিঃশ্বাস নেওয়া শুধু বেঁচে থাকার জন্য নয়—সত্যকে প্রকাশ করার দায়ে।
এই সময়ের ইতিহাস যেন বিকৃত না হয়। যেন ভবিষ্যতের বাংলাদেশ জানে—কে কাঁদছিল, আর কে কাঁদাচ্ছিল।
✍️ লেখক: নিতাই বাবু
পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক—২০১৭
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
nitaibabunitaibabu@gmail.com