পোস্টগুলি

মাহে রমজানে করণীয়: সিয়াম সাধনার প্রকৃত অর্থ ও আমাদের মানবিক দায়িত্ব

ছবি
  🕌 মাহে রমজানে করণীয়: সিয়াম সাধনার প্রকৃত অর্থ ও আমাদের মানবিক দায়িত্ব রমজান মাস – এক পবিত্র আত্মশুদ্ধির সময়, এক সংযমের পাঠশালা। সারা বিশ্বে কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই মাসে রোজা রাখেন, নামাজ আদায় করেন, ইবাদতে মগ্ন থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—রমজান কি শুধুই উপবাস? শুধু সূর্য ওঠার আগে সেহরি খাওয়া আর সূর্যাস্তের পর ইফতার করার নামই কি রোজা? আমার মনে হয় না। রমজান হচ্ছে একটি উপলব্ধির মাস। একটি আত্মজিজ্ঞাসার মাস। এমন একটি মাস যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—এই পৃথিবীতে শুধু নিজের জন্য নয়, অপরের জন্যও বাঁচতে হবে। 📖 মহানবীর উপলব্ধি ও সিয়াম সাধনার নৈতিক ভিত্তি আমার বিশ্বাস, বিশ্বনবী (সা.) যখন খাবার খেতেন, তখন তাঁর আশেপাশের গরীব, না খেয়ে থাকা মানুষদের কথা মনে করতেন। একদিন হয়তো তাঁর কোনো উম্মত সারাদিন না খেয়ে কাটাচ্ছে—এই ভাবনা তাঁকে কাঁদাতো। সেই ভাবনার গভীরতা থেকেই হয়তো মহান আল্লাহর কাছে নবীজি আহ্বান জানিয়েছিলেন এমন একটি মাসের—যেখানে মানুষ উপবাস থাকবে, অনুভব করবে ক্ষুধার জ্বালা, অনুধাবন করবে দরিদ্রতার কষ্ট। তখনই মহান আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির জন্য রমজান মাসকে ফরজ করেন। কিন্তু সেই আত্মশুদ...

আমার ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন কেন? আমি তো ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই জন্ম নিয়েছি

ছবি
  🕉️ আমার ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন কেন? আমি তো ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই জন্ম নিয়েছি! আমার স্কুলজীবনে, এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও বহুবার এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি — কেউ কেউ আমাকে জোর করে ধর্ম পরিবর্তনের কথা বলেছে । কখনো বন্ধুর ছদ্মবেশে, কখনো হুমকি বা ভয় দেখিয়ে। বলা হয়েছে, “তুমি হিন্দু ধর্মে জন্মালেও এখন আমাদের ধর্মে আসো। নইলে তুমি পথভ্রষ্ট, নরকে যাবে, তোমার মুক্তি নেই।” কিন্তু আমার প্রশ্ন একটাই — যদি আমাদের সবার সৃষ্টিকর্তা একজনই হন , তবে তিনি কেন আমাকে হিন্দু পরিবারে জন্ম দিলেন? কেন আমাকে এই ধর্ম, এই সংস্কৃতি, এই বিশ্বাসের চেতনায় গড়ে তুললেন? আমি যদি আজ ধর্ম ত্যাগ করি, তাহলে সেই সৃষ্টিকর্তার কাছেই বা কী জবাব দেব? 🌼 জন্ম পরিচয় সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা একজন মানুষ তার জন্মস্থানের জন্য দায়ী নয়, যেমন তার ধর্ম বা জাতির জন্যও নয়। জন্ম পরিচয় আসে ঈশ্বরের ইচ্ছা থেকেই। আমি হিন্দু — কারণ ঈশ্বর আমাকে সেই পরিচয়ে পাঠিয়েছেন। সুতরাং এই পরিচয়কে ত্যাগ করা মানে, যেন আমি তাঁর সিদ্ধান্ত অস্বীকার করছি। 🕉️ হিন্দু ধর্ম কি কেবল একটি বিশ্বাস? না, এটি সহিষ্ণুতার দর্শন হিন্দু ধর্ম কখনো কাউকে জোর করে ধর্মে আনার চেষ্টা ক...

আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি: স্বাধীনতা দেখেছি

ছবি
  🕊️ আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি: স্বাধীনতা দেখেছি! মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তখন আমার বয়স মাত্র আট বছর। শিশুমনে তখনকার ভয়, আতঙ্ক আর গর্ব—সব মিশে এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে আছে আজও। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বয়স কম হলেও বুঝতাম অনেক কিছু। চোখের সামনে দেখতাম কেমন করে আমাদের গ্রামে হঠাৎ হঠাৎ ছুটে আসে আতঙ্ক আর মৃত্যুভয়। আমার মা—এক অসাধারণ সাহসিনী—সন্ধ্যা নামার আগেই আমার তিন বোনকে মাটির ঘরের পেছনের সুপারি বাগানে খুঁড়ে রাখা গর্তে লুকিয়ে রাখতেন। পুরো রাত তারা সেখানেই কাটাতো, ঠান্ডা, অন্ধকার আর আতঙ্কের মধ্যে। কাকডাকা ভোরে মা গিয়ে আবার সেই গর্ত থেকে টেনে তুলতেন, যেন একটু প্রাণ ফিরে পেত তারা। আমার বড় জেঠা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানি পুলিশ সদস্য। তাঁর সাহসী চরিত্র এবং স্থানীয়দের প্রতি সহমর্মিতা ছিল অনুকরণীয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের বাড়িতে আসতেন। জেঠার সঙ্গে বসতেন, চা খেতেন, আলোচনা করতেন। ছোট্ট আমি তখন চুপিচুপি গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা স্টেনগান কিংবা রাইফেলের পাশে দাঁড়াতাম। সেগুলো স্পর্শ করতাম খুব ধীরে, যেন সাহস আর ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখছি। তারপর এলো সেই অবি...

মোবাইলের যুগে ডাকবাক্স শুধুই একটা পরিত্যক্ত লোহার বাক্স

ছবি
গত বছর সাতেক আগে একটা জরুরি কাজে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলাম। যাচ্ছিলাম অটো চড়ে। হাজীগঞ্জ ফেরিঘাট পেরিয়ে যখন কিল্লারপুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, রাস্তার বাম পাশে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে একটা ডাকবাক্স দেখতে পেলাম—যা এখনও একইভাবে ঠিক আগের জায়গাতেই আছে। ডাকবাক্সটি অনেক আগে থেকেই এখানে বসানো হয়েছিল। তবে আগে ডাকবাক্সটির সামনে এত ময়লা-আবর্জনা ছিল না, সবসময় পরিষ্কারই ছিল। বর্তমানে ডাকবাক্সটি পড়ে আছে অযত্নে অবহেলায়। ডাকবাক্সটি ময়লার স্তুপের উপর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বাক্সের চারপাশে জঙ্গলে একাকার। দেখে মনে হয়, হয়তো মাসে না হয় বছরে একবার এই ডাকবাক্সটির তালা খোলা হয়।  ডাকবাক্সটির অবস্থান হাজীগঞ্জ কিল্লারপুল সংলগ্ন ড্রেজার সংস্থার মেইন গেট ঘেঁষা। ডাকবাক্সটি দেখে নিজের স্মৃতিতে থাকা আগেকার কথা মনে পড়ে গেল। একসময় এদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ডাকবাক্স ছিল খুবই সম্মানী বস্তু। এই ডাকবাক্স ছিল অগণিত মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি। এসবের জ্বলন্ত সাক্ষী আমি নিজেই। দেখতাম, একটা চিঠির অপেক্ষায় আমার মা ডাকপিয়নের বাড়িতেও দৌড়াতেন। বাবার প্রেরিত চিঠি মা হাতে পেয়ে অস্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেন। চিঠি হাতে পেয়ে ডাকপিয়নকে কত না অনুরোধ করতে...

ঘুমের ঘোরে চাঁদের বুড়ির সাথে সাক্ষাৎ

ছবি
 স্বপ্ন কে না দেখে? স্বপ্ন দেখে আর স্বপ্ন নিয়েই তো মানুষ বেঁচে থাকে। নিজেও বেঁচে আছি স্বপ্ন দেখে! মানুষের মুখে অনেক শুনেছি ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখার কথা। অনেক মানুষকে বলতে শুনেছি, “রাতে স্বপ্ন দেখলাম, আমেরিকা গিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করছি। সেই স্বপ্ন আমার ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই শেষ!” আবার কেউ বলছিল, “রাতে স্বপ্নে দেখলাম, রাশিয়ার সাবমেরিনে চড়ে আটলান্টিক মহাসাগরের নিচে গিয়ে মণিমুক্তা খুঁজছিলাম। হঠাৎ গিন্নির শরীরের ধাক্কায় ঘুমটা ভেঙে গেলো। তারপর দেখি আমি আমার ছেঁড়া কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছি!” মানুষের মুখে এমন হাজারো স্বপ্নের কথা বারংবার শুনেছি। মানুষের মতো প্রতি রাতে ঘুমের ঘোরে নিজেও অনেক স্বপ্ন দেখেছি। তবে অন্যসব মানুষের মতো নিজে কখনো সাবমেরিনে চড়ে মহাসাগরের তলদেশে যাইনি, নিরুদ্দেশ হয়ে যাবো বলে। যদি সাবমেরিনে চড়ে পানির নিচে গায়েব হয়ে যাই, তাহলে আমার দুখিনী গিন্নি সারাজীবন আমার জন্য কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাবে। তাই অসহায় গিন্নির কথা চিন্তা করে স্বপ্নে কখনো সাবমেরিনে চড়িনি। সাবমেরিনের স্বপ্ন কখনও দেখিওনি। তবে হ্যাঁ, একবার নাসার মহাকাশযানে চড়তে চেয়েছিলাম। অত্যাধুনিক রকেটে চড়ে চাঁদের দেশে যেতে চেয়েছিল...

এখনো বেঁচে আছি… কারণ এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি!

ছবি
  📜 এখনো বেঁচে আছি… কারণ এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি! ১৯৭১ সালের সেই বিভীষিকাময় সময় আমি নিজের চোখে দেখেছি। প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত—আগুন, রক্ত আর কান্নায় মোড়া ছিল আমাদের চারপাশ। তখন আমি ছোট হলেও, মন যে বড় হয়ে গিয়েছিল—তা এখন অনুভব করি। সেই সময়, আমরা জানতাম শত্রু কে। তারা ছিল বিদেশি হানাদার । তাদের রাইফেলের মুখে, ট্যাংকের চেইনে, আমাদের স্বপ্ন মুছে দিচ্ছিল। তবু বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল এ দেশের সাধারণ মানুষ। আর আজ? আজ আমি ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে দেখি, সেই রাইফেল এখন নিজের দেশের ছেলেমেয়েদের দিকে তাক করে আছে। সেই ট্যাংক নয়, আজকের নাম ‘রাষ্ট্রযন্ত্র’—আর তার চাকার নিচে পিষ্ট হচ্ছে স্বাধীন দেশের মানুষ। পুলিশ, র‍্যাব, বিশেষ বাহিনী—আজ যারা গুলি ছোড়ে নিজের দেশেরই তরুণদের বুকে। কী নিদারুণ ব্যথা! যে স্বাধীনতার জন্য এ জাতি লাখো প্রাণ দিয়েছিল, সেই দেশেরই বাহিনীগুলো আজ নিজের দেশের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে নিঃশেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আরও ভয়াবহ হলো—আজও আছে সেই ৭১-এর  স্বাধীনতা বিরোধী মানসিকতার কিছু হিংস্র মানুষ, যারা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের নীরব অথবা সক্রিয় সহযোগী। আজ তারা সংবিধান, সংবেদনশীলতা, ম...

স্বপ্নের মায়াজাল: এক নতুন সকাল

ছবি
  স্বপ্নের মায়াজাল: এক নতুন সকাল সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। দিনের ক্লান্তি আর হাজারো দুশ্চিন্তা নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম। কখন যে ঘুমের গভীর অতলে তলিয়ে গেলাম, টের পাইনি। হঠাৎ করেই স্বপ্নটা এল। অদ্ভুত এক অনুভূতি! চারপাশে কেমন যেন নীরবতা, আর আমি নিজেকে দেখছি শুয়ে আছি, নিথর, প্রাণহীন। চারপাশে পরিচিত মুখগুলো ভিড় করে আছে, সবার চোখে জল। আমি স্পষ্ট শুনছি তাদের ফিসফিসানি, "উনি নেই, চলে গেল!" আমার বুকটা ধড়ফড় করে উঠল। এ কী দেখছি আমি! আমি কি সত্যি মরে গেছি? ভয়ের একটা হিমশীতল স্রোত আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল। চিৎকার করে কিছু বলতে চাইছি, কিন্তু স্বর ফুটছে না। হাত-পা নাড়তে চাইছি, কিন্তু কোনো শক্তি নেই। কেমন এক অসহায় অনুভূতি। পরিচিত ঘর, পরিচিত মানুষ—সবকিছুই আছে, শুধু নেই আমি। একসময় স্বপ্নের দৃশ্যটা ফিকে হয়ে এল। মনে হলো আমি কোনো এক অচেনা সুরঙ্গের মধ্যে দিয়ে ভেসে যাচ্ছি। চারপাশে মৃদু আলোর আভাস, আর একটা অদ্ভুত শান্তি আমাকে ঘিরে ধরছে। ভয়ের অনুভূতিটা ধীরে ধীরে কেটে গেল, তার জায়গা নিল এক অদ্ভুত প্রশান্তি। মনে হলো, এতদিনের সব চাপ, সব দুশ্চিন্তা যেন এক নিমেষে উধাও হয়ে গেল। ...