একবার যে ইতিহাস রচিত হয়, তা কখনো মুছে ফেলা যায় না

 

একবার যে ইতিহাস রচিত হয়, তা কখনো মুছে ফেলা যায় না

কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সেই ইতিহাসকে অস্বীকার করলেও, তা তার আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকে। কারণ ইতিহাস কেবল কিছু ঘটনা নয়, তা একটি জাতির সম্মিলিত চেতনা, ত্যাগ এবং সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন তেমনই এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস, যা বাঙালি জাতিকে বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় দিয়েছে।

১৯৭১ সালে, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন একটি দেশ পেয়েছি। এটি ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের অসীম ত্যাগ ও সাহসের ফসল। সেই ইতিহাসকে বারবার বিকৃত করার চেষ্টা করা হলেও তা যেমন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি, তেমনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানও একটি অমোঘ সত্য।

২০২৪: একটি নতুন ইতিহাসের জন্ম

২০২৪ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া একটি শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলন ধীরে ধীরে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটায়। এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে, সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ শক্তি কতটা অপ্রতিরোধ্য হতে পারে।

এই ইতিহাস কোনো একক ব্যক্তির বা দলের নয়, বরং এটি হাজার হাজার শিক্ষার্থীর, সাধারণ মানুষের এবং প্রতিটি প্রতিবাদী হৃদয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা অসীম সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে। তারা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অধিকারের জন্য লড়াই করেনি, বরং একটি ন্যায় ও সমতাপূর্ণ সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল। তাদের এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আরও শক্তিশালী হয়েছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মাধ্যমে যে একনায়কতন্ত্রের পতন ঘটানো যায়, তা এই গণঅভ্যুত্থান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মতোই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় চেতনার অংশ হয়ে থাকবে। এই আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে যে, অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব।

এই সময়কালে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা—আন্দোলন, প্রতিরোধ, এবং পতন—সবকিছুই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তাই, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন চিরন্তন সত্য, তেমনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানও একটি অনস্বীকার্য বাস্তব। এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের ঘটনা নয়, বরং একটি নতুন যুগের সূচনা, যেখানে জনগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে আরও সচেতন ও সোচ্চার। এই ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, কোনো শক্তিই জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারে না।


নিতাই বাবু

নিতাই বাবু

পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক – ২০১৭। লেখালেখির শুরু শৈশবে, এখনো চলছে।
মূলত সমাজ, সংস্কৃতি, স্মৃতিচারণা ও ছন্দনিবদ্ধ রচনায় আগ্রহী।
ভাষার শুদ্ধচর্চা ও সাহিত্যসমৃদ্ধ বাংলার প্রতি অগাধ ভালোবাসা।

🌐 ব্লগ: নিতাই বাবু ব্লগ | জীবনের ঘটনা | চ্যাটজিপিটি ভাবনা

পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

Facebook Facebook Twitter Twitter WhatsApp WhatsApp Email Email
এই পোস্টটি পড়েছেন: 0 জন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গাঁজা বা সিদ্ধি: ইতিহাস, উপকার ও ক্ষতি

এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী হলো আপনার আমার গর্ভধারিণী মা

ছোটবেলার স্মৃতিগুলো