সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মৃত্যুর আগে কেন মানুষ ধন-সম্পদের মায়া ছাড়তে পারে না?

 

মৃত্যুর এক সেকেন্ড আগে কেন মানুষ ধন-সম্পদের মায়া ছাড়ে না?

মৃত্যুর আগে মানুষ কেন টাকা-ধনের মায়া ছাড়তে পারে না?

মনস্তত্ত্ব, সামাজিক প্রভাব, আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা ও বাস্তব উদাহরণ—সব দিক থেকেই বিশ্লেষণ।

জীবনের শেষ মুহূর্তে কেউ যদি প্রশ্ন করে—“আমি কি সব কিছু সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি?” — উত্তরটা স্পষ্ট: না। মানুষের শরীর, সম্পদ ও সামাজিক মর্যাদা এ পৃথিবীতেই থেকে যায়। তবু অনেকেই মৃত্যুর ঠিক আগে পর্যন্ত ধন-সম্পদের প্রতি মায়া ছাড়তে পারেন না। এই 'আটকে থাকা' ঘটনার পেছনে কাজ করে মনস্তত্ত্ব, মূল্যবোধ, সামাজিক নিয়মানুবর্তিতা ও অজানা সম্পর্কে ভীতি — সব মিলিয়ে একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক নকশা।

১) অভ্যাসগত এবং সাইকোলজিক্যাল কারণ

ছোটবেলা থেকেই আমরা ধন-সম্পদকে নিরাপত্তা, সম্মান ও সফলতার প্রতীক হিসেবে দেখি। এই ধারণা বহুকাল ধরে আমাদের অবচেতন মনে মজে থাকে। তাই মৃত্যুর গুরুত্ব উপলব্ধি করলেও সেই অভ্যাসগত মনকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। আত্মার ঠিক আগে তরতর করে জাগে অতীত অভ্যাসের প্রভাব—“আরেকটু রেখে গেলে ভালো হত”, “আমার আপত্তি নাও বাঁচবে” ইত্যাদি চিন্তা।

২) নিরাপত্তাহীনতার ভীতি

মানুষ প্রাকৃতিকভাবে অজানার সামনে ভয় পায়। মৃত্যুর পরে কি হবে—এই অনিশ্চয়তা মানুষের কাছে বৃহৎ। ধন-সম্পদকে মানুষ ভুলভাবে মনে করে শেষ মুহূর্তে একটি 'বীমা' হিসেবে, যা হয়তো না হলেও চিন্তাটি শান্তি দেয়। বিশেষত যে পরিবার বা উত্তরাধিকার নিয়ে উদ্বেগ আছে, তারা শেষেও সম্পদ সম্পর্কে চিন্তা করে—কেননা তারা ভেবে থাকে, “আমার না থাকলে তাদের কী হবে”।

৩) সামাজিক মর্যাদা ও অহংকার

সমাজে ধনী হওয়া অনেক সময় সম্মানের কারণ। অনেকের পরিচয়, ক্ষমতা ও আত্ম-ছবি ধনের ওপর নির্মিত। মৃত্যুর মুহূর্তে সেই চিত্র ভাঙতে কষ্ট লাগে—অহংকার ছাড়াই তারা নিজেকে কল্পনা করতে পারে না। এজন্য অতিমাত্রায় মায়া থেকে যায়।

৪) মানসিক অগ্রহণযোগ্যতা — ‘লেটিং গো’ করতে কষ্ট

‘Letting go’ বা ছেড়ে দেয়া মানসিকভাবেই একটি দক্ষতা। বেঁচে থাকা অবস্থায় মানুষ বারবার নানা জিনিস হারায়—মানসিকভাবে সেই অভ্যাস গড়ে ওঠে যে: “আমি না থাকলে সব নষ্ট হবে”। তাই ছেড়ে দেওয়া মানসিক প্র্যাকটিস না থাকলে তা কঠিন হয়ে পড়ে।

৫) ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ

বিভিন্ন ধর্ম মৃতূ্যুর সঙ্গে সম্পদের সম্পর্ক ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে। কিছু ধর্মে বলাযায়—“মৃত্যুর সময়ে মোটেই সম্পদ কাজে লাগে না; কেবল কর্মফল (কর্ম)ই সঙ্গে চলে”। তবু ব্যক্তিগত বিশ্বাস, রক্ষণশীল কূলধারা বা কুসংস্কার মানুষকে সম্পদের দিকে টেনে নেয়। তাই আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ না করলে মৃত্যু-বোধ অনুযায়ী অন্তরের বদল ঘটানো মুশকিল।

৬) বাস্তব উদাহরণ — ইতিহাস ও মানুষের জীবনে দেখা পরিব্রাজ্য

বিভিন্ন ঐতিহাসিক কাহিনি কথা বলে যে শক্ত ইঙ্গিত—শক্তিমান ব্যক্তিরাও শেষ মুহূর্তে বুঝতে পেরেছিলেন, সব কিছু খালি হাতে ছাড়তেই হবে। পৃথিবীর বিখ্যাত নেতা আলেকজান্ডার (সিকান্দার) মৃত্যুর আগে অনুরূপ বার্তা দিয়েছিলেন—তার ধন-সম্পদ সবাইকে ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং দেখানোর জন্য হাত বাইরে রেখেছিলেন যে সে খালি হাতে যাচ্ছে।

একইভাবে, আপনার চারপাশেও দেখা যায়—কিছু ধনী ব্যক্তি মৃত্যুর বেসামাল মুহূর্তে গভীর অনিশ্চয়তা ও কষ্টে থাকেন, আবার অনেকে—সামান্য সম্পদের মধ্যেই সন্তুষ্টি পেয়ে শান্তিতে চলে যান। এটির মূল কারণ হলো জীবনভর গঠিত মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্য।

৭) অর্থনৈতিক ও সাংগঠনিক কারণ

উত্তরাধিকারের চিন্তা, আন্ডারলেইমিং লিগ্যাল জটিলতা, পরিবার-সংস্কৃতির প্রত্যাশা — এসবও মানুষের মানসিক চাপ বাড়ায়। অনেকে ভাবেন যে, শেষ মুহূর্তে সম্পদ ছেড়ে দিলেই হয়তো পরিবারের ক্ষতি হবে; তাই তারা সেটাকে শক্তভিত্তি হিসেবে ধরে রাখে। বাস্তবে সঠিক পরামর্শ, পরিকল্পনা ও উইল থাকলে এসব চাপ অনেক কমে যায়।

৮) মাইলফলক-উদাহরণসমূহ (কথ্য ও বাস্তব)

  • আলেকজান্ডার বড় উদাহরণ: তিনি বেঁচে থাকতে নিজের আত্মপরিচয় ও ক্ষমতার প্রদর্শন করে গেছেন—তবু শেষ পর্যায়ে তিনি সবাইকে দেখিয়েছিলেন যে মানুষ খালি হাতে যায়।
  • স্থানীয় গল্প: আমাদের সমাজে বহু বড়লোক ব্যক্তির অন্তিম সময়ে তাদের অনুশোচনা, আত্মসমর্পণ ও দান-বস্ত্রকাহিনী রয়েছে—যারা শেষ সময়ে সমাজে দান-দান শুরু করেছেন।
  • আধুনিক উদাহরণ: অনেকেই জীবনাবসান হতে দেখে আত্মীয়-স্বজন ও অফিসীয় জটিলতা নিয়ে চিন্তিত; আর কেউ কেউ মৃত্যুর আগে সমাজকল্যাণে অর্থ দান করে মানসিক শান্তি পায়।

৯) কীভাবে মায়া কমানো যায় — ব্যবহারিক পরামর্শ

সম্পদের প্রতি অনবশ্যক আসক্তি কমাতে ও জীবনের শেষের দিকে শান্ত থাকতে নিচের অনুশীলনগুলো কাজে লাগবে:

  • আর্থিক পরিকল্পনা ও উইল প্রণয়ন: আপনার ইচ্ছেমতো সম্পদ কাকে যাবে তা লেখা থাকলে মানসিক চাপ কমে।
  • দায়িত্বশীল দান ও সেবার অভ্যাস: নিয়মিত দান ও সমাজসেবা করলে ধনকে 'শেয়ার' হিসেবে দেখা শুরু হয়, মালিকানা হিসেবে না।
  • ধ্যান ও আত্মচিন্তা: নিয়মিত ধ্যান, প্রার্থনা বা মনন মানুষকে 'লেটিং গো' অনুশীলনে সাহায্য করে।
  • সাদাসিধা জীবনধারা: অতিরিক্ত ভোগবিলাস কমালে নিজের মূল্যবোধ বদলে যায়।
  • মানসিক প্রস্তুতি: মৃত্যু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা, আত্মজিজ্ঞাসা ও থেরাপি অনেকেই করেন—এতে ভয় ও অনিশ্চয়তা হ্রাস পায়।

১০) শেষ কথা — অর্থ কি শত্রু?

ধন-সম্পদ নিজে শত্রু নয়; সমস্যাটি তখনই দেখা দেয় যখন মানুষ সম্পদের প্রতি নির্ভেজাল আসক্ত হয়ে পড়ে এবং নিজের জীবন-মৌলিক উদ্দেশ্য ভুলে যায়। সম্পদকে সেবা ও দায়িত্বের হাতিয়ার হিসেবে ধরা গেলে মানুষের অন্তিম মুহূর্তও শান্তিতে কাটে — আর এটিই প্রকৃত জীবনের জ্ঞান।

"জীবন ধন-সম্পদের যোগ্যতা নয়, বরং তার ব্যবহারের নৈতিকতা ও হৃদয়ের সদগুণেই পরিমাপ করা হয়।"

সারসংক্ষেপ

মানুষ মৃত্যুর এক সেকেন্ড আগে টাকা-ধনের মায়া ছাড়তে পারে না—কারণ কাজছে অভ্যাস, নিরাপত্তাহীনতার ভয়, সামাজিক মর্যাদা, অহংকার ও মানসিক অগ্রহণযোগ্যতা। তবে সচেতন জীবনধারা, আর্থিক পরিকল্পনা, ধ্যান ও সৎকর্মের মাধ্যমে এই মায়া কমানো সম্ভব। শেষ মুহূর্তে শান্তি পেতে আজ থেকেই আত্মবিশ্লেষণ ও কর্মপরিবর্তন জরুরি।

লেখক নিতাই বাবু

✍️ নিতাই বাবু

🏆 পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক – ২০১৭
🏆 ব্লগ ডট বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর – ২০১৬
📚 সমাজ, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, গল্প, কবিতা ও সাহিত্য নিয়ে দীর্ঘদিনের লেখালেখি।

⚠️ গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

আমি চিকিৎসক নই, কোনো ধর্মগুরুও নই। আমি একজন সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্য বা ধর্মীয় বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে ইমেইলে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

🔒 গোপনীয়তা নীতি

এই পোস্টটি শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি। এখানে ব্যবহৃত কিছু তথ্য ChatGPT (by OpenAI) থেকে সংগৃহীত। কোনো ধর্ম, চিকিৎসা বা আইন বিষয়ক সিদ্ধান্তের আগে যোগ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

⚠️ সতর্কবার্তা: ব্যক্তিভেদে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। তাই এখানে দেওয়া তথ্য যাচাই না করে সরাসরি সিদ্ধান্ত নেবেন না।

প্রিয় পাঠক, আমার লেখা ভালো লাগলে 🙏 দয়া করে শেয়ার করুন এবং মন্তব্য করে উৎসাহ দিন 💖

👁️
0 জন পড়েছেন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গাঁজা বা সিদ্ধি: ইতিহাস, উপকার ও ক্ষতি

এই পৃথিবীর একমাত্র সতী নারী হলো আপনার আমার গর্ভধারিণী মা

ছোটবেলার স্মৃতিগুলো