পোস্টগুলি

মোবাইলের যুগে ডাকবাক্স শুধুই একটা পরিত্যক্ত লোহার বাক্স

ছবি
গত বছর সাতেক আগে একটা জরুরি কাজে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলাম। যাচ্ছিলাম অটো চড়ে। হাজীগঞ্জ ফেরিঘাট পেরিয়ে যখন কিল্লারপুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, রাস্তার বাম পাশে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে একটা ডাকবাক্স দেখতে পেলাম—যা এখনও একইভাবে ঠিক আগের জায়গাতেই আছে। ডাকবাক্সটি অনেক আগে থেকেই এখানে বসানো হয়েছিল। তবে আগে ডাকবাক্সটির সামনে এত ময়লা-আবর্জনা ছিল না, সবসময় পরিষ্কারই ছিল। বর্তমানে ডাকবাক্সটি পড়ে আছে অযত্নে অবহেলায়। ডাকবাক্সটি ময়লার স্তুপের উপর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বাক্সের চারপাশে জঙ্গলে একাকার। দেখে মনে হয়, হয়তো মাসে না হয় বছরে একবার এই ডাকবাক্সটির তালা খোলা হয়।  ডাকবাক্সটির অবস্থান হাজীগঞ্জ কিল্লারপুল সংলগ্ন ড্রেজার সংস্থার মেইন গেট ঘেঁষা। ডাকবাক্সটি দেখে নিজের স্মৃতিতে থাকা আগেকার কথা মনে পড়ে গেল। একসময় এদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ডাকবাক্স ছিল খুবই সম্মানী বস্তু। এই ডাকবাক্স ছিল অগণিত মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি। এসবের জ্বলন্ত সাক্ষী আমি নিজেই। দেখতাম, একটা চিঠির অপেক্ষায় আমার মা ডাকপিয়নের বাড়িতেও দৌড়াতেন। বাবার প্রেরিত চিঠি মা হাতে পেয়ে অস্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেন। চিঠি হাতে পেয়ে ডাকপিয়নকে কত না অনুরোধ করতে...

ঘুমের ঘোরে চাঁদের বুড়ির সাথে সাক্ষাৎ

ছবি
 স্বপ্ন কে না দেখে? স্বপ্ন দেখে আর স্বপ্ন নিয়েই তো মানুষ বেঁচে থাকে। নিজেও বেঁচে আছি স্বপ্ন দেখে! মানুষের মুখে অনেক শুনেছি ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখার কথা। অনেক মানুষকে বলতে শুনেছি, “রাতে স্বপ্ন দেখলাম, আমেরিকা গিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করছি। সেই স্বপ্ন আমার ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই শেষ!” আবার কেউ বলছিল, “রাতে স্বপ্নে দেখলাম, রাশিয়ার সাবমেরিনে চড়ে আটলান্টিক মহাসাগরের নিচে গিয়ে মণিমুক্তা খুঁজছিলাম। হঠাৎ গিন্নির শরীরের ধাক্কায় ঘুমটা ভেঙে গেলো। তারপর দেখি আমি আমার ছেঁড়া কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছি!” মানুষের মুখে এমন হাজারো স্বপ্নের কথা বারংবার শুনেছি। মানুষের মতো প্রতি রাতে ঘুমের ঘোরে নিজেও অনেক স্বপ্ন দেখেছি। তবে অন্যসব মানুষের মতো নিজে কখনো সাবমেরিনে চড়ে মহাসাগরের তলদেশে যাইনি, নিরুদ্দেশ হয়ে যাবো বলে। যদি সাবমেরিনে চড়ে পানির নিচে গায়েব হয়ে যাই, তাহলে আমার দুখিনী গিন্নি সারাজীবন আমার জন্য কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাবে। তাই অসহায় গিন্নির কথা চিন্তা করে স্বপ্নে কখনো সাবমেরিনে চড়িনি। সাবমেরিনের স্বপ্ন কখনও দেখিওনি। তবে হ্যাঁ, একবার নাসার মহাকাশযানে চড়তে চেয়েছিলাম। অত্যাধুনিক রকেটে চড়ে চাঁদের দেশে যেতে চেয়েছিল...

এখনো বেঁচে আছি… কারণ এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি!

ছবি
  📜 এখনো বেঁচে আছি… কারণ এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি! ১৯৭১ সালের সেই বিভীষিকাময় সময় আমি নিজের চোখে দেখেছি। প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত—আগুন, রক্ত আর কান্নায় মোড়া ছিল আমাদের চারপাশ। তখন আমি ছোট হলেও, মন যে বড় হয়ে গিয়েছিল—তা এখন অনুভব করি। সেই সময়, আমরা জানতাম শত্রু কে। তারা ছিল বিদেশি হানাদার । তাদের রাইফেলের মুখে, ট্যাংকের চেইনে, আমাদের স্বপ্ন মুছে দিচ্ছিল। তবু বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল এ দেশের সাধারণ মানুষ। আর আজ? আজ আমি ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে দেখি, সেই রাইফেল এখন নিজের দেশের ছেলেমেয়েদের দিকে তাক করে আছে। সেই ট্যাংক নয়, আজকের নাম ‘রাষ্ট্রযন্ত্র’—আর তার চাকার নিচে পিষ্ট হচ্ছে স্বাধীন দেশের মানুষ। পুলিশ, র‍্যাব, বিশেষ বাহিনী—আজ যারা গুলি ছোড়ে নিজের দেশেরই তরুণদের বুকে। কী নিদারুণ ব্যথা! যে স্বাধীনতার জন্য এ জাতি লাখো প্রাণ দিয়েছিল, সেই দেশেরই বাহিনীগুলো আজ নিজের দেশের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে নিঃশেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আরও ভয়াবহ হলো—আজও আছে সেই ৭১-এর  স্বাধীনতা বিরোধী মানসিকতার কিছু হিংস্র মানুষ, যারা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের নীরব অথবা সক্রিয় সহযোগী। আজ তারা সংবিধান, সংবেদনশীলতা, ম...

স্বপ্নের মায়াজাল: এক নতুন সকাল

ছবি
  স্বপ্নের মায়াজাল: এক নতুন সকাল সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। দিনের ক্লান্তি আর হাজারো দুশ্চিন্তা নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম। কখন যে ঘুমের গভীর অতলে তলিয়ে গেলাম, টের পাইনি। হঠাৎ করেই স্বপ্নটা এল। অদ্ভুত এক অনুভূতি! চারপাশে কেমন যেন নীরবতা, আর আমি নিজেকে দেখছি শুয়ে আছি, নিথর, প্রাণহীন। চারপাশে পরিচিত মুখগুলো ভিড় করে আছে, সবার চোখে জল। আমি স্পষ্ট শুনছি তাদের ফিসফিসানি, "উনি নেই, চলে গেল!" আমার বুকটা ধড়ফড় করে উঠল। এ কী দেখছি আমি! আমি কি সত্যি মরে গেছি? ভয়ের একটা হিমশীতল স্রোত আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল। চিৎকার করে কিছু বলতে চাইছি, কিন্তু স্বর ফুটছে না। হাত-পা নাড়তে চাইছি, কিন্তু কোনো শক্তি নেই। কেমন এক অসহায় অনুভূতি। পরিচিত ঘর, পরিচিত মানুষ—সবকিছুই আছে, শুধু নেই আমি। একসময় স্বপ্নের দৃশ্যটা ফিকে হয়ে এল। মনে হলো আমি কোনো এক অচেনা সুরঙ্গের মধ্যে দিয়ে ভেসে যাচ্ছি। চারপাশে মৃদু আলোর আভাস, আর একটা অদ্ভুত শান্তি আমাকে ঘিরে ধরছে। ভয়ের অনুভূতিটা ধীরে ধীরে কেটে গেল, তার জায়গা নিল এক অদ্ভুত প্রশান্তি। মনে হলো, এতদিনের সব চাপ, সব দুশ্চিন্তা যেন এক নিমেষে উধাও হয়ে গেল। ...

চোখের সামনে নিজেকে পুড়তে দেখেছি

ছবি
  🔥 চোখের সামনে নিজেকে পুড়তে দেখেছিলাম 🔥 একদিন ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমটা যেন ছিল কোনো নরম হাতের আশীর্বাদ, শান্তির চাদরে মোড়ানো এক অচেনা যাত্রা। ঘুমের ঘোরে আমি এমন এক স্বপ্নে প্রবেশ করলাম, যেটা আমার পূর্বজীবনের কোনো গল্প নয়—এ যেন ভবিষ্যতের, বা তারও ওপারে কোনো অলিখিত অধ্যায়। স্বপ্নে আমি আনন্দে ভেসে বেড়াচ্ছিলাম। হালকা আলো, শীতল বাতাস, গায়ে গায়ে নরম তরঙ্গের মতো ভেসে আসা হাসির ছায়া—যেন স্বর্গের সীমানায় হেঁটে বেড়াচ্ছি আমি। না কোনো দুঃখ, না কোনো ক্লান্তি, না কোনো সময়ের গলা টিপে ধরা বাঁধন। কেবল প্রশান্তি আর মুক্তির গান। এই অপার্থিব অনুভবের মাঝে হঠাৎই কানে আসে এক কান্নার শব্দ। খুব পরিচিত। ঘরের ভেতরের কেউ যেন কাঁদছে—চিৎকার করে বলছে, "ওঠো না কেন? শুনছো না? আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছো?" আমি চোখ ফেরালাম। দেখি আমারই ঘরের মেঝেতে আমি শুয়ে আছি—নিস্তব্ধ, নিশ্চল। আমার চারপাশে পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে কাঁদছে। আমি সবই দেখছি, শুনছি, কিন্তু আমার শরীরে ফিরতে পারছি না। যেন সেই দেহ হয়ে উঠেছে একটি শূন্য ঘর, যার প্রতিটি দরজা-জানালা বন্ধ। আমি অনেক চেষ্টা করেও ভেতরে ঢুক...

হিন্দুধর্মে চার যুগ

ছবি
  🕉️ হিন্দুধর্মে চার যুগ 🕉️ এই কলিযুগে মানুষের ধর্ম কী? যুগধর্ম কী? যুগধর্ম হল যুগের ধর্ম । হিন্দুধর্মে চারটি যুগ রয়েছে যথাঃ— সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ ও কলিযুগ । বর্তমান সময় কলিযুগের অন্তর্ভুক্ত । প্রত্যেক যুগে ভগবানকে সন্তুষ্টি বিধানের জন্য আলাদা ভাবে ধর্মানুষ্ঠান করা হত। এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতের (১২/৩/৫২ শ্লোক) এ শুকদেব গোস্বামী পরিক্ষিত মহারাজ কে বলেন— কৃতে যয্ঞায়তো বিষ্ণুং ত্রেতায়াং যজতো মখৈঃ। দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌ তদ্ধরিকীর্তনাত্‌॥ অর্থাৎ, সত্যযুগে বিষ্ণুকে ধ্যান করে, ত্রেতাযুগে যজ্ঞের মাধ্যমে যজন করে এবং দ্বাপরযুগে অর্চনাদি করে যে ফল লাভ হত, কলিযুগে কেবলমাত্র “হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র” কীর্তনে সেই সকল ফল লাভ হয়। সত্যযুগ যুগধর্ম ছিল ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান। বৈদিক শাস্ত্রমতে ধর্মের চারটি স্তম্ভ — সত্য, দয়া, তপ, শৌচ — সবই বর্তমান ছিল। মানুষের আয়ুষ্কাল ছিল ১ লক্ষ বছর। হাজার হাজার বছর ধ্যান (তপস্যা) করে ভগবানকে লাভের চেষ্টা হত। ত্রেতাযুগ যুগধর্ম ছিল যজ্ঞ । যজ্ঞে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে ভগবানকে আহ্বান করা হত। মানুষের ...

অযত্নে অবহেলায় আজও দাঁড়িয়ে আছে মোগল স্থাপত্য ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ কেল্লা

ছবি
  অযত্নে অবহেলায় আজও দাঁড়িয়ে আছে মোগল স্থাপত্য ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ কেল্লা প্রাচ্যের ডান্ডি নামে খ্যাত নারায়ণগঞ্জে রয়েছে মোগল আমলের অনেক স্থাপনা। তার মধ্যে একটি হলো হাজীগঞ্জ দুর্গ বা হাজীগঞ্জ কেল্লা । দুর্গটি রাজধানী ঢাকা থেকে ১৪.৬৮ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। এটি নারায়ণগঞ্জ থেকে চিটাগাং রোড যেতে মাঝপথে নবীগঞ্জ গুদারাঘাট -এর একটু সামনেই, হাজীগঞ্জ ফায়ার ব্রিগেডের পরেই এই কেল্লার অবস্থান। নারায়ণগঞ্জ সিটির হাজীগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক কেল্লাটি আজও দাঁড়িয়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। একসময় এটি খিজিরপুর দুর্গ নামেও পরিচিত ছিল। নারায়ণগঞ্জ-চিটাগাং রোড ভায়া ডেমড়া পথ ধরে চলতে গেলে এই কেল্লাটি চোখে পড়ে। স্বাধীনতার আগেই কেল্লাটির চারপাশে গড়ে উঠেছিল টিনসেট পাটের গোডাউন , কারণ তখন নারায়ণগঞ্জ ছিল পাট ও বস্ত্রশিল্পের অন্যতম কেন্দ্র। বর্তমানে যদিও পাটের সেই সুনাম নেই, তবুও গোডাউনগুলো এখনও সচল। কেল্লাটি আজ এই সব গুদামের আড়ালে হারিয়ে যেতে বসেছে। কেল্লার ইতিহাস ও স্থাপত্য জানা যায়, ঢাকা শহরকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে সপ্তদশ শতকের শুরুতে এই কেল্লাটি ন...